দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভিডিও গেম এর খুব দুর্নাম আছে। অনেকে মনে করেন ভিডিও গেম মানেই হল আসক্তি, অমনোযোগিতা আর সময়ের অপচয়। কিন্তু জেনে অবাক হবেন, ভিডিও গেম আপনাকে স্মার্ট আর স্বাস্থ্যবান করবে। কিভাবে? চলুন জেনে নিই।
অধিকাংশ ভার্চুয়াল গেম গুলোতে খেলোয়াড়দের জন্য শিক্ষাগত এবং শারীরিক সুবিধার ব্যাপারটি রয়েছে। ভিডিও গেম বিভিন্ন দিকে তাৎক্ষনিক নজর আর প্রতিক্রিয়া দিতে হয়। যার ফলে ব্যস্ত মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তা চর্চা হয়। এছাড়া শারীরিক ব্যাপার গুলোতো আছেই। এখন ভিডিও গেম এর ৮টি ভিন্ন ভিন্ন ভালো দিক গুলো আপনাদের জানাচ্ছি।
ড্রাইভিং গেম বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বাড়ায়ঃ
জার্নাল নেইচারের গবেষণায় জানা গেছে, ক্রমাগত ড্রাইভিং ভিডিও গেম গুলো বয়স্কদের স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী মনোযোগ বাড়ায়।
৬০ থেকে ৮৫ বছরের একদল লোককে নিউরো রেইসার নামের একটি রেসিং গেম প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে খেলতে দেওয়া হয়। ছয় মাস পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
অ্যাকশন গেম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ২৫ শতাংশ দ্রুততর করেঃ
অ্যাকশন গেম গুলোতে টিকে থাকতে হতে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, যারা অ্যাকশন গেম খেলে তারা তাদের চারপাশে কি ঘটছে তার একটি ভাল ধারনা রাখে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
এক গবেষণায় ১৮ থেকে ২৫ বছরের একদল ভিডিও গেম খেলোয়াড়কে দুই দলে ভাগ করা হয়। একদলকে অ্যাকশন গেম Call of Duty 2 এবং Unreal Tournament খেলতে দেওয়া হয়। আরেকদলকে দেওয়া হয় স্ট্রেটেজি গেম The Sims 2। উভয় দলকে ৫০ ঘণ্টা করে খেলতে দেওয়া হয়। তারপর এক পরীক্ষায় দেখা যায় অ্যাকশন গেম খেলোয়াড় ২৫ শতাংশ দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।
ভিডিও গেমস দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ
ভিডিও গেম খেলার সময় সামান্য রঙের পরিবর্তনের জন্য সচেতন থাকতে হয়। তারা চাক্ষুষ প্রক্রিয়াকরণের জন্য মস্তিষ্ককে নানা ভাবে কাজে লাগায়। এতে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভিডিও গেম খেলে তারা অন্যদের তুলনায় সূক্ষ রঙের প্রার্থক্য ৫৮ শতাংশ বেশি ভালোভাবে বুঝতে পারে।
শিশুদের দক্ষতা বাড়াতে ভিডিও গেম:
ভিডিও গেম চোখ আর হাতের ভাল সমন্বয় করায় শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। ভিডিও গেম শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশেও সাহায্য করে।
অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ৩ থেকে ৬ বছরের শিশু ভিডিও গেম খেলে তাদের বিভিন্ন দিকে দক্ষতা বাড়ে। তারা কিকিং, ক্যাচিং, থ্রোয়িং এবং বল বাউন্সিং ভাল করতে পারে।
ভিডিও গেম সার্জনদের দক্ষতা উন্নত করেঃ
বিভিন্ন ভিডিও গেম সার্জনদের অস্ত্রোপচারে দক্ষতা বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা যায়, যেসব ডাক্তার ভিডিও গেম খেলে তাদের চোখ আর হাতের কাজের খুব ভাল সমন্বয় থাকে।
ভিডিও গেম শারীরিক কার্যকলাপ উৎসাহিত করেঃ
কম্পিউটারের সামনে বসে বসে গেম খেললে শারীরিক কোন ফায়দা হবে না। কিন্তু নতুন এক ধরনের গেম এসেছে যেগুলো শারীরিক কসরতের মাধ্যমে খেলতে হয়। এই খেলাগুলো শরীর ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
এমন একটি গেম হল Dance Dance Revolution। এটি খেলতে হলে স্ক্রিনে সংকেত দেখার সাথে সাথে পা গুলো জায়গা বরাবর নিতে হয়।
ভিডিও গেম খেলার পর অমনোযোগী শিশুদের পড়ায় মনোযোগ আসেঃ
যেসব শিশু পড়ায় অমনোযোগী তারা ভিডিও গেম বিশেষ করে অ্যাকশন গেম খেললে পড়ায় মনোযোগ আসে। এমনকি দ্রুত আর সঠিক ভাবে পড়তে পারে তারা।
একটি গবেষণায় দেখা যায়, ডিস্লেক্সিয়ায়(পড়ার অসুবিধা) ভোগা শিশুদের ভিডিও গেম খুবই কার্যকরি।
ভিডিও গেম পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করেঃ
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা কমাতে ভিডিও গেম এর সাহায্য করে। গেম গুলো রোগীকে যন্ত্রণা থেকে অন্যমনস্ক করে দেয়।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দুই রোগীকে Nintendo খেলতে দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, খেলার সময় দুইজনেরই যন্ত্রণা কম হয়েছিল।
ভিডিও গেম এর ভাল দিক গুলো দেখলেন। তাই বলে কাজের সময়েও ভিডিও গেম খেলতে বসে যাবেন না। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা সারাদিন ভিডিও গেম নিয়ে পড়ে না থেকে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে খেলা উচিত।
সূত্রঃ businessinsider