দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির দম্পতি স্বামী মাইকেল ও স্ত্রী অলিম্পিয়া দুই জনই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন মাত্র ৩২ ঘণ্টার ব্যবধানে। এবং এরই মাধ্যমে অবসান ঘটলো তাদের মধুরতম ৬৭ বছরের সুখী দাম্পত্য জীবনের।
সময়ের আবর্তনে আমরা অনেক ভালোবাসার কাহিনীই শুনে থাকি। সেসব নিয়ে নাটক, সিনেমা, গল্প, কবিতাও রচিত হয়। আজ আমরা জানবো নিউজার্সির এক দম্পতির কথা যাদের ভালোবাসার গল্প রূপকথার মতোই, সেই সাথে অবিশ্বাস্যও!
এই দম্পতি এক অপরকে চিনতেন শৈশব থেকেই যে বয়সে তারা এক সাথেই খেলাধুলা করতেন বাসার সামনের রাস্তাতেই। তাদের দুইজনের বাসায় সে সময় এক ব্লক দূরে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তার দুই কন্যা সন্তানের জনক-জননী ছিলেন। ৯৪ বছর বয়স্ক মাইকেল তার বন্ধু মহলে “মুলি” নামে পরিচিত ছিলেন। তার পুরো নাম মাইকেল ডেনেটিস (Michael DeNittis)। তিনি Woodbridge High School এর প্রধান কর্তব্যরত ব্যক্তি ছিলেন। মারা যাবার চার বছর আগে থেকেই তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
অন্যদিকে অলিম্পিয়া যিনি আত্মীয়মহলে পরিচিত ছিলেন লী (Lee) নামে, তিনিও বয়সজনিত রোগ এবং নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তার পুরো নাম অলিম্পিয়া ডেনেটিস (Olympia DeNittis)। তিনি যৌবনে একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন।
তার নাতনী অ্যান ম্যারি (AnnMarie McDonald ) থেকে জানা যায়, তার নিউমোনিয়া যখন কিছুটা ভালোর দিকে তখন তিনি খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, খাবার খেতে চাইতেন না বলে তিনি সব সময় খাবার ফিরিয়ে দিতেন। এভাবে তিনি খুব দুর্বল হয়ে পড়েন এবং শরীর আরও শীর্নকায় হয়ে যাওয়ার ফলে তাকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
অলিম্পিয়া এবং মাইকেল শৈশবেও কখনো একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকেন নি, এবং তাদের মাঝে ভালোবাসার বন্ধনটা ছিল খুব দৃঢ়। তার নাতনী আরও বলেন, অলিম্পিয়া নাকি চাইতেন মাইকেলের আগে যেন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কারণ মাইকেল জীবনকে বড় ভালবাসতেন এবং এর প্রতিটা সময় উপভোগ করতে পছন্দ করতেন। তাই প্রিয়তম বন্ধু বলেই নয় নিজের স্বামীর দীর্ঘায়ুর জন্যও অলিম্পিয়া বেশ সচেতন ছিলেন।
কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! স্বামীর আগেই তিনি মারা যান, রবিবার ভোর ৪ টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু পরিবার এই খবরটা মাইকেলকে দিতে চান নি, অদ্ভুত ব্যাপার মাইকেল ব্যাপারটি টের পেয়েছিলেন এবং তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন তিনি স্বপ্নে নিজেকে মৃত দেখেছেন। এরপর পরই তিনি তার স্ত্রীর খবর জানতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন এবং তার স্ত্রীর প্রেসক্রিপশন দেখতে চান। তার পরদিন সোমবার দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিটে মাইকেলও মারা যান।
কখনও মাইকেল ও অলিম্পিয়ার মধ্যে কোন দূরত্ব তৈরি হয়নি, তাঁদের একে অপরের প্রতি ভালবাসার বন্ধনটা ছিল বেশ দৃঢ়। তারা সবসময়ই নিজেদের ভালোমন্দের দিকে খেয়াল রাখতেন। একসঙ্গে তাদের অসংখ্য সুখস্মৃতি রয়েছে। কখনও একজনকে ছেড়ে আরেকজন থাকার কথা ভাবতে পারতেন না। একজনকে ছাড়া থাকতে হলে, পৃথিবীতেও হয়তো অপরজন বড় নিঃসঙ্গ হয়ে যেতেন। হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাও ছিল সেরকম কিছু।
দুইজনে পৃথিবী ছাড়লেও, ভালবাসার যে নিদর্শন তারা রেখে গেছেন তা তাদের অমর করে রাখবে। এই দম্পতিকে শুক্রবার St. Anthony of Padua Roman Catholic Church এ সমাহিত করা হয়।
সূত্রঃ NYdailynews