দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্ববাসী দুই পরাশক্তি রাশিয়া এবং আমেরিকার মাঝে মানসিক সেই স্নায়ুযুদ্ধ কালীন সময়ের কথা ভুলতেই বসেছিলেন। এবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঞ্চল বর্তমান ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে আবার কূটনীতিক চালে সরব, দুই সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া। ইতোমধ্যে ইউক্রেনে চলমান অস্থিরতা দমনে রুশ সেনাবাহিনী পাঠানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি প্রস্তাব গত শনিবার অনুমোদন করে রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ। ফলে ইউক্রেনে যেকোনো মুহূর্তে শুরু হতে পারে রাশিয়ান সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনা পাঠানোর প্রস্তাব অবশ্য ইউক্রেনের অঞ্চল ক্রিমিয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসিওনভের সাহায্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চাওয়া হয়েছে। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের অনুমোদনের ফলে এখন রুশ অভিযানে কেবল অপেক্ষার পালা।
এদিকে ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ চোখে পড়ার মত, ইতোমধ্যে রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মাঝে প্রায় ৯০ মিনিট ফোন আলাপ হয়েছে। এসময় ওবামা পুতিনকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে সৈন্য পাঠায় তাহলে রাশিয়াকে বিশ্ব দরবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। জবাবে পুতিন জানায়, রাশিয়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অস্থিরতা এবং রাশিয়ার নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবার অধিকার রাশিয়ার রয়েছে। তাছাড়া ক্রিমিয়ায় প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসিওনভের সাহায্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া সৈন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। এক্ষেত্রে যদি কোন বাঁধা আসে তার জবাব দেয়া হবে। রাশিয়া চায় না তার অঞ্চলে এসে কেউ নাক গলাক।
এদিকে রাশিয়ার সাথে মার্কিন এবং তার সহযোগী দেশ সমূহের কূটনীতি ইতোমধ্যে হালকা হতে চলেছে, আসন্ন জি-এইট জোটের শীর্ষ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অংশ না নেয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তা ছাড়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিভেন হারপারও ইতোমধ্যে জি-এইট সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেননা বলে জানিয়ে দিয়েছেন। জার্মানি তাদের অবস্থান জানাতে কিছু সময় নিলেও, ব্রিটেন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা কোন রকম আগ্রাসন সহ্য করবে না।
অপর দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক বিবৃতিতে রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একুশ শতকে এসে উনিশ শতকের মানসিকতায় কথা বলছেন। রাশিয়াকে এখনি তাদের সৈন্য ফেরত নিতে হবে। তা না হলে এর জবাব দেয়া হবে।”
এদিকে ইউক্রেনের অঞ্চল ক্রিমিয়া এখন মূলত রাশিয়ার দখলে। ইউক্রেন একে নিজেদের সার্বভৌমত্বে হুমকি হিসেবে দেখে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেনকে সকল সামরিক এবং আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়ে বারাক ওবামা ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে জাতিসংঘ ইতোমধ্যে এই বিষয়ে প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিলেও তা কার্যত ভেস্তে যাবে, কারণ রাশিয়া জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য দেশ ফলে তারা নিজেদের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে যেকোনো প্রস্তাব বাতিল করে দিবে। অপর দিকে আমেরিকা এবং তাদের মিত্ররা ন্যাটো বাহিনী নিয়ে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে চাইলেও তা অনেকটাই কষ্ট সাধ্য। ইউক্রেন রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ। রাশিয়ার অঞ্চলে বাইরে থেকে ন্যাটো হামলা চালানো প্রায় অসম্ভব।
বর্তমান অবস্থায় কার্যত পশ্চিমা সাহায্য সাথে থাকলেও ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে একাই লড়তে হতে পারে। এক্ষেত্রে চলুন দেখে নেয়া যাক রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের সামরিক শক্তির পার্থক্য।
- ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানে অংশ নিতে এই মুহূর্তে প্রস্তুত আছে প্রায় ৮ লক্ষ ৪৫ হাজার সৈন্য। অপর দিকে ইউক্রেনের মোট সৈন্য সংখ্যা এক লক্ষ ৩০ হাজার।
- রাশিয়ার সামরিক বাজেট যেখানে ৭৮ বিলিয়ন ডলার সেখানে ইউক্রেনের মাত্র ১.৬ বিলিয়ন ডলার!
- প্রশিক্ষণের দিক দিয়ে রাশিয়ার সৈন্য পৃথিবীর সেরা সৈন্যবাহিনীদের একটি অপর দিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার তুলনায় যৎসামান্য।
- রাশিয়ার গোয়েন্দা অধিদপ্তর বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী সংস্থা, আর ইউক্রেন তার সাথে অতুলনীয়।
- অপর দিকে নিয়মিত বাহিনী ছাড়াও রাশিয়ার ৪৫.৬ মিলিয়ন নাগরিক যেকোনো সময়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অতএব ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ সত্যি এক অসম লড়াইয়ের বিষয় বস্তু। পারবে কি ইউক্রেন নিজেদের উপর বৃহৎ শক্তি রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ ঠেকাতে! কিংবা আমেরিকারই বা এখানে কি পদক্ষেপ নেয়ার আছে? তবে কি পৃথিবীবাসী তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছে?
সূত্রঃ সিএনএন