দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণভাবে দেখতে নিরীহ বলে অনেকেই শখ করে বিড়াল পুষে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে, এই বিড়াল থেকেই ভয়াবহ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। আজকে আমরা এ বিষয়েই জানবো।
অনেকেই বাসায় লালন-পালনের জন্য কুকুরের চেয়ে বিড়ালই বেশি পছন্দ করেন। কুকুরের কামড় থেকে জলাতঙ্ক হতে পারে এমনটা ভেবে অনেকেই কুকুর না পুষলেও বিড়ালকে নিরীহ ভেবে নিয়ে তা বাসায় পুষে থাকেন। এমনিতে বিড়াল কাউকে কামড় দেয় না। সাধারণভাবে ধারণা করা হয় কুকুরের কামড় তুলনায় বিড়ালের কামড় নস্যি, কিন্তু সাবধান! নতুন গবেষণায় জানা গেছে, বিড়াল থেকেও হতে পারে ভয়াবহ ইনফেকশন(Infection)। যদিও মানুষ বা কুকুরের তুলনায় বিড়ালের মুখে জীবাণু কম থাকে কিন্তু মায়ো ক্লিনিকের (Mayo Clinic) গবেষকরা সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, বিড়ালের কামড়ের গভীরতা বেশী এবং কামড় দেবার সাথে সাথে তা শরীরের ভেতরে জীবাণু প্রবেশ করাতে সক্ষম। তাই বিড়াল কাউকে কামড় দিলে সাথে সাথেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।
মায়ো ক্লিনিকের গবেষক প্লাস্টিক সার্জন Dr.Brain Carlsen তাদের গবেষণার বরাত দিয়ে জানান যে, কুকুরের দাঁত ভোঁতা ধরণের হয় এবং তা বেশী গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। অন্যদিকে বিড়ালের দাঁত বেশ সূচালো হওয়াতে এতে জীবাণু বেশ গভীরে ঢুকতে সক্ষম হয়। কারণ তাদের দাঁতের গোঁড়ায় ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু আছে যা সহজেই মানুষের ইমিউন সিস্টেম (Immune system) আঘাত করতে পারে।
গবেষকরা ২০০৯ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ বিড়ালের কামড় নিয়ে একটি গবেষণা করেন। এসব রোগীরা সবাই তাদের হাতে বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের গড় বয়স ছিলো ৪৯ বছর এবং ৬৯ ছিলো নারী। এদের মাঝে অর্ধেক রোগীই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। অন্যদিকে বাকীরা সাধারণ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হওয়া এবং চিকিৎসা গ্রহণে গড়পড়তা সময় ছিলো ২৭ ঘন্টা। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ৫৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিলো। অন্যদিকে ৩৬ রোগী আক্রান্ত হওয়া মাত্রই চিকিৎসার জন্য হাজিরা দিয়েছিলেন। তবে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৩৮ জনেরই সার্জারী দরকার হয়েছিলো ঘা পরিষ্কার বা ক্ষত হতে টিস্যু অপসারণ করতে।
এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যান্ড সার্জারি ফাউন্ডেশনের জার্নালে। যারা বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, ৮ জনের বেশী রোগীর একাধিকবার সার্জারী করতে হয়েছিলো। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীকে প্রাথমিকভাবে এন্টিবায়োটিক দেয়া হলেও ১৪ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এ এন্টিবায়োটিকে কাজ হয়নি এবং শেষে হাসপাতালেই তাদের ভর্তি হতে হয়েছিলো।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, বিড়ালের কামড়ে কতোটুকুই বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে বা একটু কামড় দিলে হাসপাতালেই বা কেন ভর্তি হতে হবে! আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই, মানব শরীরে যেমন HIV ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে বিভিন্ন কারণে তেমনই পশু সমাজও এর বাইরে নয়। এক বিড়াল থেকে আরেক বিড়ালের শরীরেও HIV সংক্রমণ হতে পারে। Feline Leukemia Virus (FeLV) এর কারণে ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। এতে করে যে বিড়ালটি এ রোগ বহন করছে সে কোনো সমস্যা ছাড়াই অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু কোনো মানুষ সে আক্রান্ত বিড়ালটি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার শারীরিক এবং আভ্যন্তরীণ সমস্যাও ঘটতে পারে, যা ভীষণ বিপদজনকও বটে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বিড়ালের কামড়ের ক্ষেত্রে জরুরিভাবে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ডাক্তার, ক্লিনিক বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষকগণ আরো জানিয়েছেন, কামড়ের ক্ষেত্রে যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। কামড় দিলে যে তা যথেষ্ট বিপজ্জনক হতে পারে সে ব্যাপারে বা আমরা কতখানি সচেতন? ডঃ কার্লসেন জানিয়েছেন যে, বিড়ালের কামড় শুরুতে যতই নিরীহ মনে করা হোক না কেন আসলে কিন্তু তা নয়। সুতরাং আমাদের বিড়াল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানী হওয়া প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: NEWSMAX HEALTH