দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মালয়েশিয়ান বিমান নিখোঁজের পেছনে ওই বিমানের ২ পাইলটের হাত আছে বলে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। মার্কিন গোয়েন্দারাও একই ধারণা পোষণ করেছেন বলে মালয়েশিয়াকে জানিয়েছে। যে কারণে গতকাল শনিবার দুই পাইলটের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে মালয়েশিয়ান পুলিশ।
বিমানটি উড্ডয়নের এক ঘণ্টা পর ইচ্ছে করেই বিমানটির গতিপথ ঘোরানো হয়েছে বলে শনিবার মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। এমন কাজ বিমানটির ভেতরে থাকা কেও করেছে বলেও মালয়েশিয়ান পুলিশ সন্দেহ করছে। তার এসব কথার সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারা। তারা বিমানের দায়িত্বে থাকা প্রধান পাইলট ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহ এবং তার সহযোগী কো-পাইলট ফারিখ আব্দুল হামিদকে সন্দেহের তালিকায় এসে তদন্ত শুরু করেছে। এমনকি বিমানটিতে থাকা যাত্রী ও ক্রুদেরও সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্তের কাজ করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ান বিভিন্ন মিডিয়ার উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, গতকাল শনিবার গোয়েন্দা পুলিশ ক্যাপ্টেন জাহিরি আহমেদ শাহর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে। তারা জাহিরি আহমেদ শাহর বাড়িতে কমপক্ষে দু’ঘণ্টা অবস্থান করে জাহিরির ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ বিভিন্ন জিনিস-পত্র খতিয়ে দেখে। সেখানেই গোয়েন্দারা সন্দেহজনক বেশ কিছু আলামত পান। যদিও তার জড়িত হওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গোয়েন্দারা দেখেন, ৫৩ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন জাহারি তার বাড়িতে আগেই নিজ ফ্লাইটের একটি কাল্পনিক চিত্রসহ প্রতিরূপ রেখেছিলেন।
অপরদিকে বিমানটির কো-পাইলট ২৭ বছর বয়সী ফারিখ আব্দুল হামিদের বিষয়েও ব্যাপক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। বিমানের অন্যান্য ক্রুদের জীবন বৃত্তান্ত ও গত কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডও বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দারা সংবাদ সংস্থাকে এমনও বলছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে লাদেন বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ককপিটে প্রবেশ, নির্গমণ এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে কড়াকড়ি নিয়ম মেনে চলে থাকেন। এমনকি ককপিটের দরজাগুলোও থাকে বুলেটপ্রতিরোধী। আবার দরজাও সব সময় ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়ে। এতে বাইরের কেও ভেতরে ঢুকে পড়া সম্ভব নয়। মালয়েশীয়ান বিমানের যা ঘটুকনা কেনো তাতে পাইলটদের সন্দেহ থেকে কোন মতেই বাদ দেওয়া যাচ্ছে না বলে গোয়েন্দারা সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন।
সিঙ্গাপুরের তিমাসেক পলিটেকনিকের উড্ডয়ন বিশেষজ্ঞ পল ইয়াপ সংবাদ মাধ্যমকে এ বিষয়ে বলেছেন, ‘বিমানকে রাডার বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে প্রথম মানুষ যারা ইচ্ছা/অনিচ্ছাকৃত ভুলের সঙ্গে অবশ্যই জড়িত, এটা নিশ্চিত যে তারা হলো ককপিটে থাকা পাইলটগণ। তাদের একজন হোক আর দুজনই হোক তারা এর পেছনে জড়িত।’
নিখোঁজ বিমানটির সন্ধানে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ভারত মহাসাগরে চলছে ব্যাপক আকারে তল্লাশি। অপরদিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও গতকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে তার সমুদ্রসীমায় বিমানটি অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে বিমানটিকে ছিনতাই করে পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ এনে পশ্চিমা মিডিয়ায় যে গুজব রটানো হয়েছিল গতকাল শনিবার তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ ২৩৯ আরোহীসহ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ বিমানটি নিখোঁজের পর থেকে নানা জল্পনা-কল্পনার জাল বিস্তৃত হচ্ছে। ঠিক কি কারণে বোয়িং বিমানটির সঙ্গে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের রাডার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো এবং সেটি কিভাবে কোথায় সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেলো, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি।