ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলের হত্যার বিচার ১৪ বছরেও শেষ হয়নি। ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে শহরের চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় তিনি মারা যান। আজ ৩০ আগস্ট তার ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী। আমরা এই প্রয়াত সাংবাদিকের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
বিগত ৪০ বছরে দেশে বহু সাংবাদিক নিহত হয়েছে। এসব সাংবাদিক হত্যা ঘটনার অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলো সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল। তিনি কোন সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারিকে তোয়াক্কা করেননি। দৈনিক রানার পত্রিকায় তাইতো আমরা দেখেছি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারিদের নাম প্রকাশ করতে। তাঁর বাবা গোলাম মাজেদ সাহেব ছিলেন অত্র অঞ্চলের একজন নামকরা সাংবাদিক। তাঁরই উত্তরাধিকার সূত্রে সাংবাদিকতা জীবনে পা রেখেছিলেন সাইফুল আলম মুকুল। তিনি কারও কাছে মাথা নত করেননি। যা সত্য তাই অপকটে লিখেছেন। আর তাই তাকে বলি হতে হলো এভাবে। আবার তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার ২১ বছরের ছেলে অঞ্জনকেও হত্যা করা হয়। কারণ একটিই বাবা ও দাদাদের মতো সেও প্রতিবাদি হয়ে উঠছিলেন।
এ অচলাবস্থার মধ্যেও যশোরে সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন প্রতি বছর তার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এবারো মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শোকর্যালি, শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে যশোর প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের দুটি ইউনিয়ন।
নিহত সাংবাদিক মুকুলের পারিবারিক সূত্র, মামলার বাদী, এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সূত্র জানিয়েছেন, ঘটনার পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন যশোর কোতয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি।
পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল বিএনপির সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরে সদস্য ইকবাল কবির জাহিদসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এই মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।
রাজনৈতিক প্রভাব এবং আইনি জটিলতার কারণে এক পর্যায়ে এ মামলার কার্যক্রম থেমে যায়। পরে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ মুকুল হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স তার তদন্তে নতুন দুইজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেন।
২০০৬ সালের ১৫ জুন ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করে যশোরেরস্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২, এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম এবং রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর ২০১০ সালে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে এ মামলার ২৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর এজেডএম ফিরোজ জানান, এর আগে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে এ মামলার আসামি ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ফারাজী আজমল হোসেনের ওই আবেদনের নিস্পত্তি না হওয়ায় নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।