দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ।। ইমামি নামের ১৮ বছরের এক গরিলা এই সপ্তাহের শুরুতে স্যান ডিয়েগো জু সাফারি পার্কে একটি মেয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। গর্ভযন্ত্রণা কালীন পুরো সময়টা চিড়িয়াখানার পশু-চিকিৎসকেরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। চলুন জানা যাক বিস্তারিত।
যুক্তরাষ্ট্রে স্যান ডিয়েগো জু সাফারি পার্কে হাসপাতালের জরুরী সি বিভাগে ইমামি নামের একটি গরিলাম সন্তান প্রসব করে। কিন্তু তাতে জটিলতা দেখা দেয়ায় তাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এক বিবৃতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন :
“পুর্নাঙ্গ বাচ্চাটিকে ডেলিভারি করতে সাহায্য করেন সাফারি পার্ক হাসপাতালের একটি টিম যাদের মধ্যে ছিলেন হাসপাতালের গ্লোবাল স্টাফ, বাইরের বিশেষজ্ঞ পদধারী ডাক্তার, একজন পশু- সার্জেন এবং একজন সদ্যঃপ্রসূত মানব শিশু বিষয়ক ডাক্তার যিনি বর্তমানে ইউসিএসডি মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত। বাচ্চাটির প্রসবকালীন কিছু ঝামেলার কারণে একটু জটিলতার সম্মুখীন হয়েছিলো। তাকে পশু হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তাকে সেইখানে অক্সিজেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তরল দেয়া হচ্ছে। গরিলা বেড রুমে একই রকম পরিস্থিতিতে মা ইমামিও সুস্থ হয়ে উঠছে।”
“পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ইমামিকে সি বিভাগে নেয়াটা ছিলো সঠিক সিদ্ধান্ত। আমরা যদি অপারেশন টা করতে আর একটু দেরি করতাম, তাহলে বাচ্চাটাকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হতো না।” -বললেন সাফারি পার্কের পশু-সেবা বিভাগের এসোসিয়েট ডিরেক্টর নাদিন ল্যাম্বারস্কি।
যদিও এনবিসি স্যান ডিয়েগো জানায় যে অস্ত্রপাচারটি সম্পূর্ণ জটিলতা মুক্ত ছিলো না। জন্মের দুই দিন পরে বাচ্চাটাকে আবারো হাসপাতালে আনা হয় যেন পশু- চিকিৎসকেরা তার অসুস্থ ফুসফুসের চিকিৎসা করতে পারেন।
পশু চিকিৎসকেরা বাচ্চাটাকে জন্মের পর থেকেই ঘড়ির সময় ধরে ধরে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন এবং লক্ষ্য করেন যে বাচ্চাটির শ্বাস- প্রশ্বাস জনিত জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। বাচ্চাটির হৃদ-স্পন্দন আস্তে আস্তে বাড়ছিলো আর সে খুব দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছিলো । এরপর বুকের একটি এক্স-রে নেবার পর চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হলেন যে বাচ্চাটির ফুসফুস কোলাস্পড।
এরপর শুক্রবার সকালে পশু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে। নিওনেটাল ও অ্যানেস্থিওলজিস্ট বিশেষজ্ঞরাও তাদের সাথে ছিলেন যারা এসেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও স্যান ডিয়েগো স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে । তারা বাচ্চা গরিলাটির শ্বাস নালীর মধ্যে নল ঢুকিয়ে একটি মিউকাস প্লাগ টেনে বের করে আনলেন। পার্কের কর্মকর্তারা মনে করেন, বাচ্চাটির জটিল ডেলিভারির সময় কোনো ভাবে এটি রয়ে গেছে। এরপর চিকিৎসকেরা ফুসফুস জোড়া লাগিয়ে দিলেন। বিস্তারিত এখানে দেখুন
এরপর বাচ্চাটিকে নানাভাবে নিরীক্ষা করার পর তারা বলেন যে, দুইটি ফুসফুস সমান ভাবে কাজ করছে। এই ঘটনাটিকে তারা তাদের ‘বিজয়’ হিসাবে আখ্যা দেন। উল্লেখ্য, আইইউসিএন গরিলার দুটি উপ-প্রজাতিকে ‘ভীষণ ভাবে বিপন্ন’ উপাধি দিয়েছে। আরো ভয়ের কথা যে গরিলাদের বনে টিকে থাকাটাই এখন হুমকির মুখে;কারণ যেমন পশুদের আশ্রয় স্থলের স্বল্পতা ও খন্ডায়ন প্রক্রিয়া, তেমনি ইবোলা ভাইরাসও । ১৯৮৮ সাল থেকে ‘এসোসিয়েশন অফ জু’স এন্ড একোরিয়াম’ অন্যান্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সস্থার সাথে মিলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক গরিলা প্রজাতি টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের নাম ‘স্পেসিস সারভাইবাল প্ল্যান’।
ডেমোগ্রাফিক্যাল ও জেনেটিক্যাল তত্ত্ব গুলো হিসাবে রেখে এবং সেই সাথে ৫২ টি নির্দিষ্ট চিড়িয়াখানায় যেখানে গরিলারা থাকে সেখানকার উন্মুক্ত জায়গায় এই প্রকল্পটি নিরাপদে সন্তান প্রসব করার সুবিধা প্রদান করে যাতে করে গরিলারদের একটি সুস্থ, কর্মঠ এবং বংশগতিতে বৈচিত্র্যময় প্রজাতি গড়ে উঠতে পারে এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ভাবছেন।
তথ্যসূত্র : NBC San Diego