দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নৈসর্গিক বন রাতারগুল নিয়ে সিলেট বাসীর গর্বের শেষ নেই। অনেকেই একে বলেন সিলেটের সন্দুরবন। তবে এই বনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করতে বনবিভাগ ইতোমধ্যে পর্যটন শিল্পের নামে ইট-কাঠ ঢুকাচ্ছে।
রাতারগুল বনকে পর্যবেক্ষণ করতে এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচ তলা বিশাল পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, আরও হচ্ছে রেস্টহাউজ, রাস্তা। আর এসব এর জন্য ইতোমধ্যে বনের বুক ডিঙ্গিয়ে ঢুকছে ইট বোঝাই পিকাপ-ট্রাক। বলার অপেক্ষা রাখেনা রাতারগুলের প্রাকৃতিক রূপ এসব ইট কাঠে কোন পর্যায়ে যাবে।
বনবিভাগের কথা হচ্ছে তাঁরা রাতারগুলকে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত পর্যটন স্পট বানাতে চায়। এজন্য ইতোমধ্যে ৬ কোটি টাকার বাজেট হয়েছে। কাজও চলছে পুরো দমে। কাজের সুবিধার জন্য ১৫ ফুটের রাস্তা বানানো হয়েছে বন কেটে। এখান দিয়েই পর্যটক নিয়ে যাওয়া হবে রেস্ট-হাউজে, সেখান থেকে যাওয়া হবে ওয়াচ টাওয়ারে।
চলুন জেনে নিই পরিবেশ বিশ্লেষকরা কি বলছেন? বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম এই বিষয়ে বলেন, “বন রক্ষার নামে এখানে ইট দিয়ে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব অবকাঠামো অবশ্যই বনের প্রাকৃতিক রূপ নষ্ট করবে। বনে যদি মানুষের তৈরি ঘরবাড়ি বানানো হয় তা আর বন থাকেনা। রাতারগুল জলাবিশিষ্ট একটি বনভূমি। এখানে দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় আছে। তবে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে বনের ক্ষতি বৈ সুফল কিছুই হবেনা। বনকে বনের মতোই থাকতে দেয়া হোক।”
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল জলার বন (সোয়াম্প ফরেস্ট) হওয়ায় ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের পুরো এলাকা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল। ২০১২ সালের বিশ্ব পর্যটন দিবসে এটি প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট হিসেবে জনসম্মুখে আসে।
রাতারগুলে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচ-বরুণগাছের পাশাপাশি বেত, ইকরা, খাগড়া, মূর্তা ও শণজাতীয় গাছ। এছাড়া বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও নয় প্রজাতির উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে।
বন বিভাগ বলছে এখানে পর্যটন স্পট করা হবে, এখানে মানুষ আসবে বন দেখবে। বিশ্রাম নিবে, পিকনিক করবে এতে করে বনের পরিচিতি বাড়বে। এতসব কিছু করতে ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) দপ্তর ‘রাতারগুল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য স্থাপন ও উন্নয়ন’ নামে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
তবে বনের উন্নয়ন প্রাকৃতিক ভাবেই হওয়া উচিৎ বলে বিশ্লেষকরা একে প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দিতে বলেন। বিশ্লেষকরা বলেন, সরকারের উচিৎ এখানে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ না করে এই বনের নিরাপত্তা বাড়ানো, যাতেকরে কেউ অবৈধ গাছ কেটে বনের ক্ষতি করতে না পারে।
ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “রাতারগুলকে এভাবে নষ্ট না করে একে প্রাকৃতিক জাদুঘর ঘোষণা করা হোক, এখানে সব ধরণের পর্যটকের অবাদ জাতায়েত বন্ধ করা উচিৎ। এতে বনের বৈচিত্র্য ঠিক থাকবে। কিন্তু বনবিভাগ তা না করে এতে বাড়তি কৃত্রিম স্থাপনা নির্মাণ করছে। রাতারগুলকে ও কতল করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।”