দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সতের শতকে ফ্রান্স এবং স্পেনের আক্রমণ থেকে নেদারল্যান্ড নিজেদের ভূমি এবং দুর্গ রক্ষা করার জন্য পশ্চিম ব্রাবেন্ট পানি সমৃদ্ধ অঞ্চলে দুর্গ পরিখা নির্মাণ করেছিলেন। আজ আমরা পাঠকদের জন্য সেই দুর্গ পরিখার বর্তমান চিত্র তুলে ধরবো।
ফোর্ট ডি রোভেরি পুরোটাই গভীর দুর্গ পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই পরিখাটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে যেন সৈনিকরা মার্চপাস্ট করে পার হতে পারে কিন্তু কোন ধরনের নৌযানের জন্য এটি উপযোগী চলার পথ নয়। পরবর্তীতে এটি বাঁক নিয়েছে পূর্ব দিকের দুর্গের বরাবর ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্গটি সুরক্ষিত থাকবে।
মজার বিষয় হলো অনেক দূর থেকে পরিখাটি অদৃশ্য মনে হয়। তাই একে মোসেস ব্রীজ বলা হয়ে থাকে। মোসেস ব্রীজ কথাটি এসেছে হযরত মুসা (আ) এর মিশরের নীল নদ পাড়ি দেওয়ার সময় তৈরিকৃত অদৃশ্য পরিখা থেকে, নেদারল্যান্ডের এই পরিখাটিতেও সেই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। যখন ব্রীজের সর্বোচ্চ বিন্দু পর্যন্ত পানির স্তর থাকে তখন সূর্যের আলোর প্রতিফলনের জন্য এই পরিখাটিকে অদৃশ্য মনে হয়।
শত্রুরা যখনি দুর্গের দিকে হানা দিবে তখন পরিখার বরাবর আসতে থাকলে মনে হবে যেকোনো মুহূর্তে ব্রীজের চারপাশের দেয়াল ভেঙ্গে পড়বে এবং তারা পানিতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি তেমন নয় নির্দিষ্ট পরিমাণ মানুষের বেশি এর ভেতর দিয়ে আসা মাত্র পানির সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে ব্রীজটি কিছুটা নিচের দিকে নেমে যাবে এবং পরিখাটির পানির চাপে ব্রীজটি ধসে পড়বে।
প্রথমে মাটি দিয়ে ব্রীজের গভীরতম স্থানে কাঠ শীটের রেখাযুক্ত পাইল তৈরি করা হয়। তারপর এর ভেতর সিঁড়ি ও ডেক বসানো হয়। ব্রীজের পাইলগুলো অ্যাকায়া জাতের এক ধরনের বিশেষ কাঠের তৈরি। অ্যাকায়া কাঠের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই কাঠে ছত্রাক আক্রমণ করে না। পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় কাঠের স্থায়িত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। ফলে নিমজ্জিত পরিখার বাঁধ নির্মাণে অ্যাকায়া কাঠের খ্যাতি রয়েছে।
এই ব্রীজটি পানিকে এমনভাবে আটকে রাখে দেখে মনে হবে মুসার নীলনদের সেই পথ যেখানে মুসার হাতের লাঠি দ্বারা পানিকে আদেশ করলেন আর পানি সরে গিয়ে একটি পথচলার রাস্তা হয়ে গেল। নেদারল্যান্ডের সাঙ্কেন ব্রীজ আপনাকে ঐতিহাসিক এক অনুভূতির পাশাপাশি পানির ভেতর দিয়ে যাওয়ার অন্যরকম স্বাদ প্রদান করবে।
তথ্যসূত্রঃ ইনহ্যাভিটেট