দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রিয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক লীলাভূমি। কিন্তু ধারাবাহিক জলবায়ু পরিবর্তন রাক্ষসের মত গ্রাস করছে এর অনেক কিছু। অনাগত ভবিষ্যতে নেই হয়ে যাবে আরও অনেক স্থান। এমন ১০টি স্থান নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর, অস্ট্রেলিয়া
এটি পৃথিবীর বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর। এর দৈর্ঘ্য ৩৪৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার। অনেক আগে থেকে এটি পানির নিচের আকর্ষণ হয়ে ছিল। কিন্তু বর্তমানের জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষয় ধরিয়েছে এর শরীরে। দূষণের কারণে সাগরের পানির তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। যা এর জন্য মারাত্মক হুমকি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১০০ বছর পরে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
ভেনিস, ইতালি
ভালবাসার নগরী ভেনিস আজ বন্যার অত্যাচারে প্রেষিত। এর সুন্দর চ্যানেলগুলোই আজ কাল হল। এই অবস্থা চলতে থাকলে এই শতাব্দীর শেষে ভেনিস নগরী ইংরেজি ভ্যানিশ হয়ে যাবে।
মৃত সাগর
প্রাচীন মৃত সাগর ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গত চল্লিশ বছরে এর এক তৃতীয়াংশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এটি এখন মাত্র ৮০ ফুট গভীর। এই নদীর একমাত্র পানির উৎস থেকে জর্দানের পানি সংগ্রহের কারণে এর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। হয়তো আর পঞ্চাশ বছর পরে এটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
গ্লাসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক, মন্টানা
যেখানে আগে ১৫০টি হিমবাহ ছিল জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আজ আর মাত্র ২৫টি অবশিষ্ট আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলোও নিঃশেষ হয়ে যাবে। যার ফলে ভেঙ্গে পড়বে এখানকার বাস্তুতন্ত্র।
মালদ্বীপ
বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ মালদ্বীপ। সমুদ্র সমতল হতে গড়ে মাত্র পাঁচ ফুট উপরে আছে এই অনিন্দ সুন্দর দ্বিপটি। বর্তমান হারে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে আগামী ১০০ বছর পর ডুবে যাবে এটি। এই ঝুঁকির কারণে মালদ্বীপের সরকার অন্যদেশ থেকে ভূমি কিনে তাতে জনগণকে স্থানান্তরিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে।
সিসিলি
ভারত সাগরে ১১৫টি দ্বীপ নিয়ে সিসিলি দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। এতে ৯০,০০০ মানুষ বাস করে। পর্যটনের জন্য এতে গড়ে উঠেছে অভিজাত হোটেল। উদ্বেগের বিষয়, ক্রমাগত এর সৈকত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে সিসিলি দ্বীপপুঞ্জ ডুবে যাবে।
আল্পস
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কিইং অঞ্চল আল্পস। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এর উচ্চতা কমে যাচ্ছে। প্রতিবছর ৩ শতাংশ হারে এর হিমবাহ বরফ গলে যাচ্ছে। এই হারে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ এতে আর কোন বরফ অবশিষ্ট থাকবে না। সাধারণ পাহাড়ে পরিণত হবে এটি।
মাগদালীন দ্বীপপুঞ্জ, কুইবেক, কানাডা
বালুকাময় সৈকত এবং বেলেপাথরের পাহাড় নিয়ে সেইন্ট লরেন্স উপসাগরে মনোরম দ্বীপপুঞ্জ মাগদালীন। প্রচণ্ড বাতাসের কারণে এবং বরফের দেয়াল গলে যাওয়ায় এর সমুদ্রতীর প্রতিবছর ৪০ ইঞ্চি করে কমে যাচ্ছে। বাধাদানকারী বরফের দেয়াল পুরোপুরি গলে গেলে আগামী ৭৫ বছরের মধ্যে এর তীর ঝড়ের কারণে বিলীন হয়ে যাবে।
আলাস্কা
আমেরিকার সর্ব উত্তরে অবস্থিত তুন্দ্রা অঞ্চল আলাস্কা। এর পরিবেশ পুরোপুরি স্বকীয়। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন এর স্বকীয়তা নষ্ট করছে। এর পরিকাঠামো নষ্টের পাশাপাশি নাটকীয় ভাবে এর বর্তমান বাস্তুতন্ত্র উলটে যাচ্ছে।
আথাবাস্কা হিমবাহ, আলবার্টা, কানাডা
উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা হিমবাহ হল আথাবাস্কা হিমবাহ। এটি কলম্বিয়ার ৬ বর্গ কিলোমিটারের বরফক্ষেত্রের ২০৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এর হিমবাহ গত ১২৫ বছর ধরে গলছে। বর্তমানে এর গলন খুব দ্রুত হচ্ছে। প্রতিবছর ৬.৬ থেকে ৯.৮ ফুট হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে এর আয়ুষ্কাল বেশি দিন নেই।
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর এই অসাধারণ জায়গাগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এভাবে চললে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে, ভবিষ্যতের পৃথিবী কি বৈচিত্রহীন নিস্তরঙ্গ হবে?
সূত্রঃ time