দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর জীব বৈচিত্রে ভরপুর এই বন। বিশ্বে জনপ্রিয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখানেই বিচরণ করে। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।
বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনাঞ্চল কম। তার উপর এটি নিন্মাঞ্চল হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন হানা দেয়। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে প্লাবিত হবে বনের আধিকাংশ অঞ্চল। এতে ধ্বংস হবে এখানকার জীব বৈচিত্র।
সুন্দরবনের ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশে আর ৪৫ শতাংশ ভারতে পড়েছে। বাংলাদেশ নিচু হওয়ায় এদেশের অংশে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। হিসাব করে দেখা গেছে গত দেড় দশকে সুন্দরবনে পানি ১ থেকে ২ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরে তলিয়ে যাবে সুন্দরবনের ১৫ শতাংশ। জাতিসংঘের এক রিপর্টে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার বাড়লে সুন্দরবন সম্পূর্ণ তলিয়ে যাবে।
এখনি সুন্দরবনের পশ্চিমের মান্দার বাড়িয়ার কিছু অংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিপজ্জনক তথ্য হচ্ছে, ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জন পেথিক তার এক গবেষণায় বলেছেন, আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশে ১০ ভাগ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুন্দরবনের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ
পৃথিবীতে শিল্প বিপ্লবের ফলে অনেক বেশি কলকারখানা স্থাপিত হয়। এইসব কারখানা থেকে চরম হারে কার্বন নিঃসরণ ঘটে। অতিরিক্ত কার্বন পরিবেশের জন্য খুবি ক্ষতিকর। এটি গ্রীন হাউজ ইফেক্টের জন্য দায়ী। যার ফলে বিশ্বের উষ্ণতা দিন দিন বাড়ছে। গলতে শুরু করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের জমাট বরফ। এতে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ নিন্মভূমি হওয়ায় সমুদ্রের বাড়তি পানির নিচে এর অধিকাংশ তলিয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে আছে। প্রাথমিক ভাবে সমুদ্রের পানি নদীর মাধ্যমে ভেতরের দিকে ঢুকে পড়বে। এই লবণাক্ত পানি অনায়াসে সুন্দরবনে পৌঁছে যাবে। এতে সুন্দরবনের অনেকাংশ তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এর জীব বৈচিত্র ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হবে।
সুন্দরবন রক্ষায় করণীয়ঃ
সারা বিশ্বে কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশর ভূমিকা মাত্র ৩ শতাংশ। তারপরও বাংলাদেশকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর ফলাফল সম্পূর্ণ ভোগ করতে হচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী অবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় এবং ক্ষতির কবলে পড়া দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও কোন ধনী দেশ তা করছে না। সুন্দরবনের কথা বিবেচনা করে সরকারকে অন্য দেশের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
১৯২৭ সালে প্রথম বন আইন হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে এতে কিছু উল্লেখ ছিলোনা। ১৯৫৫ সালে নতুন নীতিমালা করে পরে ১৯৬২ সালে সংশোধন করা হয়। তবে কোন নীতিমালায় বনজ সম্পদ রক্ষায় স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। তাই অতি সম্প্রতি সুন্দরবন রক্ষায় নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। সাগরের সাথের মোহনা নিচু করে দিতে হবে যাতে পানি নেমে যেতে পারে। প্রয়োজনে নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে সাগরের পানি প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
সুন্দরবন রক্ষায় আশু পদক্ষেপ না নিলে এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ হারাতে হবে। তার ফল হবে ভয়াবহ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার মত আর কিছুই থাকবে না। সবচেয়ে ক্ষতি হবে জীব বৈচিত্রের। বাঘ সহ অনেক প্রাণ হারিয়ে যাবে সুন্দরবনের সাথে সাথে। তাই সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে প্রকৃতি এবং ধনী দেশগুলোর বিরুদ্ধে এখনি রুখে দাঁড়াতে হবে।