মাঈনুল ইসলাম নাসিম ॥ এক বাংলাদেশির সততার এক দৃষ্টান্ত পাওয়া গেলো লস এঞ্জেলেসে ইস্টার নাইটে। এই বাংলাদেশির সততার দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রবাসে বাংলাদেশিদের প্রশংসামূলক কাজের সর্বশেষ আলোকবর্তিকাটি প্রজ্জ্বলন করলেন বাংলাদেশের এক কৃতি সন্তান লস এঞ্জেলেস প্রবাসী কাজী মশহুরুল হুদা। তিনি পবিত্র ইস্টারের রাতে নগদ ৫ হাজার ডলারসহ একটি অস্ট্রেলিয় পাসপোর্ট কুড়িয়ে পেয়ে তা আবার সসম্মানে ফিরিয়ে দিয়ে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
এই গুণি ব্যক্তিকে হয়তো অপনারা অনেকেই চিনতেও পারেন। কারণ তিনি একজন মুখাভিনেতা। এমন একজন সেলিব্রেটি হয়েও মাটির মানুষ কাজী মশহুরুল হুদা। তিনি শিল্পী পরিচয় নিয়ে যথারীতি ভালোবাসেন মা-মাটি-মানুষ ও দেশকে। লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি বিদেশ বিভুঁইয়ে সমুজ্জ্বল করতে প্রবাসে পরীক্ষিত সৎ বাংলাদেশির তালিকায় এবার নাম লেখালেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মূকাভিনেতা কাজী মশহুরুল হুদা। ‘মাইম এ্যাম্বেসেডার’ হিসেবে ইতিমধ্যে তাঁর খ্যাতি বিশ্বজোড়া।
ঘটনাটি নিয়ে তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের ২১ এপ্রিল আলাপচারিতায় কাজী মশহুরুল হুদা বর্ননা দিচ্ছিলেন ওয়েস্ট হলিউডে সেদিন রাতে আসলে কি ঘটেছিল। তিনি জানিয়েছেন, ইস্টারের ছুটিতে একদল পর্যটক লস এঞ্জেলেসে বেড়াতে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। ১৯ এপ্রিল শনিবার রাতে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার এক পর্যায়ে যখন তাঁরা উঠে যাচ্ছিলেন তখন তাদের মধ্যে এক মহিলা ভুলক্রমে ফেলে যান তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগটি। পুরো বিষয়টি দৃষ্টির আড়াল হয়নি তথন ‘মাইম আর্টিস্ট’ কাজী মশহুরুল হুদার। ভুলে ব্যাগ ফেলে রেখেই প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যান তাঁরা।
তখন কাজী মশহুরুল হুদা ব্যাগটি তুলে নিয়ে ভেতরে দেখতে পান নগদ ৫ হাজার ডলার, সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন কাজী মশহুরুল হুদা, যে করেই হোক ব্যাগের মালিককে খুঁজে বের করা চাই। ভিড়ের মাঝেই অনেকক্ষণ হন্যে হয়ে খোঁজার পর দেখতে পেলেন সেই মহিলা উন্মাদের মতো ছুটোছুটি করছেন হারিয়ে যাওয়া ব্যাগের খোঁজে। উপস্থিত সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি যখন ব্যাগটি মহিলার হাতে তুলে দিলেন, তখন সবার কাছেই গোটা বিষয়টি পুরোপুরি অবিশ্বাস্যই মনে হয়েছিল।
কাজী মশহুরুল হুদা যেনো বাঙালিদের এক ‘বাংলার অহংকার’। এই মূকাভিনেতার দিকে বিস্ময় ভরা চোখে ভদ্রমহিলা বেশ কিছুক্ষণ এমনভাবে তাকিয়ে রইলেন। ‘কেন তুমি ফিরিয়ে দিলে আমার এই মহামূল্যবান ব্যাগ?’ মাইমের চেয়েও সাবলীল জবাব। শুরুটা পাল্টা প্রশ্ন দিয়ে, ‘কেনো ফিরিয়ে দেবো না? এটাতো তোমার কাছেই ছিলো, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। লস এঞ্জেলেসে ইস্টারের ছুটির দিনগুলো তোমার আনন্দে ভরে উঠুক !’ ভ্রমণে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলেন অস্ট্রেলিয় সেই পর্যটক, কৃতজ্ঞতা জানাতেও কুণ্ঠাবোধ করলেন না ওই অস্ট্রেলিয় মহিলা। ‘গড ব্লেস ইউ’ বলে তাই বিদায় বেলায় সশ্রদ্ধ উচ্চারণ করলেন ওই মহিলা।
এমন মানবিক দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়। পৃথিবীর সব মানুষ এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন- সে প্রত্যাশা আমাদের সকলের।