দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিশুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল তার ঘর। এখানেই সে আদর, ভালবাসা ও যত্ন পায়। আস্তে আস্তে সব শিখতে থাকে। তবে শিশুরা অনেক কিছুই বুঝতে পারেনা। যার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতি বছর ২ কোটি ১০ লক্ষ শিশু হাসপাতালে যায় এবং ২০,০০০ শিশু মারা যায়।
অবিভাবকের বেখেয়ালের ফলে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাই শিশুদের নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে মা-বাবাসহ সকল অবিভাবককে সদা সতর্ক থেকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার শিশুকে নিরাপদ রাখতে আমাদের ৯টি পরামর্শ…
১. পনির কাছে শিশুকে কখনো ছেড়ে যাবেন না
শিশুরা পানি খুবই উপভোগ করে। কিন্তু পানি খুব সহজেই শিশুর জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। বাথটাব, বালতি, পানির বড় পাত্রে থাকা মাত্র এক ইঞ্চি পানিতেই ডুবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বাচ্চাকে কখনো পানির কাছে একা রেখে যাবেন না। বাচ্চাকে গোসল করানোর সময় যদি ফোন আসে বা কলিংবেল বাজে, তবে তাকে টাওয়েল দিয়ে পেঁচিয়ে কোলে করে নিয়ে যান। আবারো বলছি, কয়েক সেকেন্ডের জন্যও একা রাখা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
আপনার আশে-পাশে সুইমিংপুল, পুকুর, ডোবা, নালা অর্থাৎ পানির কোন আধার থাকলে তার চারপাশে বেড়া দিয়ে দিন। যাতে শিশু কোনভাবেই তাতে পৌছুতে না পারে।
আরেকটি সতর্কতা বিষয়, গরম পানি সবসময় বাচ্চাদের থেকে দূরে রাখবেন। বাচ্চাদের চামড়া খুবই কোমল। তাদের জন্য সামান্য পুড়ে যাওয়া অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
২. পরিষ্কারক দ্রব্য এবং রাসায়নিক পদার্থ দূরে রাখুন
সাবান, ডিটারজেন্ট থেকে শুরু করে পিঁপড়া-তেলাপোকার বিষ সবই বাচ্চাদের জন্য খুবই বিষাক্ত। তাই এসব তাদের থেকে দূরে রাখুন। বাচ্চারা সামনে যা পায় তাই মুখে দেয়। তাই পরিষ্কারক দ্রব্যগুলো বাচ্চাদের নাগালের বাইরে কোন একটি তাকে রাখুন। অথবা কোন একটি রুমে রাখলে তা এমনভাবে বন্ধ করে রাখুন যাতে বাচ্চারা প্রবেশ না করতে পারে।
প্রসাধনী সামগ্রীও শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর বাচ্চারা বড়দের থেকে দেখে দেখে অনেক কিছু শিখে। প্রসাধনী সামগ্রী আপনাকে ব্যবহার করতে দেখে তারা এর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তাই এগুলোও তাদের নাগালের বাইরে রাখুন।
কোন একজন নিকটিস্থ ডাক্তারের ফোন নম্বর রাখবেন। যাতে এরূপ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে পরামর্শ নেওয়া যায়।
৩. শিশুর শোয়ার স্থান যথাসম্ভব খোলামেলা রাখুন
বাচ্চার মৃত্যুর ৬০ শতাংশ কারণ বাচ্চার শোয়ার স্থানের পরিবেশের ওপর হয়ে থাকে। অতিরিক্ত কাপড় থাকলে তা বাচ্চার মুখ ও নাক ঢেকে দিতে পারে। যার ফলে বাচ্চার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাচ্চার শোয়ার জায়গাটি যাতে চারপাশে আবদ্ধ থাকে। এতে বাচ্চা পড়ে যাবে না। ভিতরে বাচ্চার গায়ে দেওয়ার কম্বলটি নিচের দিকে আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন যাতে বাচ্চার মুখের দিকে যেতে না পারে। আর অবশ্যই হালকা কম্বল ব্যবহার করবেন।
৪. বৈদ্যুতিক তার ও সকেট বাচ্চার আওতার বাইরে রাখুন
বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুবই বেশি ঘটে। তাই এই বিষয়ে খুবই সতর্ক থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যথাসম্ভব বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন। একান্তই যদি কোন কক্ষে তা না করা যায় তবে বাচ্চা যাতে সেখানে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করুন। যেসব সকেট নিচের দিকে থাকে সেগুলো টেপ দিয়ে ঢেকে দিন অথবা ভিতরের কানেকশন কেটে দিন। আরেকটি বিষয়, বৈদ্যুতিক যন্ত্র পানির কাছাকাছি রাখবেন না। এটি পানিতে পড়লে পানিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। এতে শক খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
৫. ছোট ছোট সামগ্রী শিশুদের আওতার বাইরে রাখুন
বাচ্চারা যা পায় তাই মুখে দেয়। তাই ঘরের বিভিন্ন ছোট ছোট সামগ্রী যেমন পয়সা, বল, বোতাম, গয়না প্রভৃতি বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন। এগুলো গিলে ফেললে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যাবে। কখনো হাতে এরকম কিছু দেখলে তা সরিয়ে রাখুন।
খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চার খাওয়া ছোট ছোট টুকরো করে দিন। যাতে সে গিলতে পারে। সবচেয়ে ভাল হয় বাচ্চাকে এগুলো মুখে না দেওয়ার জন্য অভ্যস্থ করলে।
৬. দরজা, জানালা আর সিঁড়ি বন্ধ রাখুন
সব ধরণের দরজা জানালায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে বাচ্চা বেরুতে না পারে। এছাড়া সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গেলে বাচ্চা মারাত্মক আঘাত পাবে। তাই এইসব বন্ধ রাখার ব্যবস্থা রাখাই উত্তম। একান্তই সম্ভব না হলে বাচ্চা বেরুতে পারবে না এমন ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বাচ্চা যাতে দরজা জানালার বা সিঁড়ির কাছে না যায় তার শিক্ষা দিন। বারবার সেখান থেকে সরিয়ে আনলে সে আর সেদিকে যাবে না।
৭. আগুন থেকে দূরে রাখুন
বাচ্চাকে অবশ্যই আগুন থেকে দূরে রাখতে হবে। এমনকি আগুন লাগার মত সামগ্রী নাগালের বাইরে রাখুন। সম্ভব হলে বাসায় একটি আগুন নিবারক সিলিন্ডার রাখুন।
৮. পোষা পশু থাকলে তার থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখুন
পরিবারে পোষা প্রাণী থাকলে বাচ্চা এর সাথে খেলবে তা স্বাভাবিক। তাই পশুটি যাতে ক্ষতিকর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এটির যাতে কামড়ানো বা আছড়ানোর অভ্যাস না থাকে। এর নখ ছোট করে কেটে রাখুন। বাচ্চাকে কখনো এর সাথে একা রেখে যাবেন না। এছাড়া পশুটিকেও এমনভাবে যত্ন নিন যাতে এটি আক্রমণাত্মক না হয়।
৯. জরুরি অবস্থার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকুন
যত ভালভাবেই ঘরকে বাচ্চার জন্য নিরাপদ রাখুন না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকা। এই জন্য আপনি যা করবেন…
* হৃৎপিণ্ড উজ্জীবনের প্রক্রিয়া এবং পেটে খোঁচা পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে রাখুন। যাতে জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা দিতে পারেন।
* অবশ্যই একটি ফাস্ট এইড বক্স রাখুন।
* বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফোন নাম্বার যেমন: এ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল, পড়শিদের নাম্বার হাতের নাগালে রাখুন। পরে যাতে খুঁজতে না হয়।
অভিভাবকের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বাচ্চাদের নিরাপদ রাখা। এই জন্য আপনাকে যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন। এছাড়া আপনার চিন্তায় অন্য কিছু থাকলে তাও কাজে লাগান। দুর্ঘটনা কখনো বলে কয়ে আসে না। এরজন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার বেখেয়ালে দুর্ঘটনা ঘটলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। আপনার শিশুর নিরাপদ ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
সূত্রঃ Howstuffworks