দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বৃহস্পতিবার নারাগণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানার পাড় এলাকা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী সৈয়দ সাইফুল ইসলামকে সাভারের নবীনগর থেকে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধার করা হয়। র্যাব-৪ তাকে উদ্ধার করে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যান। রাতে সাংবাদিকদের সাইফুল ঘটনার বর্ণনা দেন।
২৬ ঘণ্টা পর রাতে ব্যবসায়ী সাইফুলকে র্যাব উদ্ধার করে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। এরপর রাত ১টা ৩৫ মিনিটে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করেন। প্রথমে র্যাবের এক কর্মকর্তা ঘটনার সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরেন। এসময় র্যাব কর্মকর্তা বলেন, সাইফুল ইসলামকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। তিনি এখনও অসুস্থ্য। খুব সংক্ষিপ্তভাবে তাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় আমরা দেবো। এরপর পাশে উপবিষ্ট সাইফুলকে বক্তব্য দিতে দেন।
সৈয়দ সাইফুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে ঘটনার কথা তুলে ধরে বলেন, “রাতে আমি বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দিই। তখন পেছন থেকে আমাকে ধাক্কা মেরে মাইক্রোবাসে তুলে নেই। আমাকে লাঠি দিয়ে পায়ে বাড়ি মারে। তারপর আমাকে মাইক্রোতে করে কোথায় কোথায় ঘুরিয়েছে তা জানিনা। আমাকে মাইক্রোর মধ্যে পায়ের কাছে ফেলে রাখে। আজ সকালে আমাকে একটা পাউরুটিক আর পানি খেতে দেয়। তারপর আমাকে রেখে তারা কোথায় যেনো চলে যায়। সারাদিন তারা আর আসেনি। পরে রাতে এসে আমাকে বললো, চল। গাড়িতে নিয়ে আসলো। গাড়িতে পায়ের নিচে আমার হাত পা বাঁধা অবস্থায় নিয়ে এসে আমাকে নামিয়ে দিলো। আমি নামার পরে জানলাম এটি নবীনগর। আমাকে হাতের বাঁধন খুলে লাথি দিয়ে গাড়ি স্লো করে ফেলে দেয় ওরা। তখন আমি এক ভদ্রলোক দাঁড়ানো ছিল তাকে ধরে হোটেলে আসি। এরপর র্যাব আমাকে ওখান থেকে নিয়ে আসে।”
সাইফুলের এই বক্তব্যের সময় তাকে বেশ বিধ্বস্ত দেখা যাচ্ছিল। সাংবাদিকরা এ সময় তাঁকে প্রশ্ন করেন, তিনি কাওকে চিনতে পেরেছেন কি না। তিনি বলেন, আমি কাওকে চিনিনাই। কে এমন কাজ করতে পারে সে প্রশ্নে জবাবেও সাইফুল বলেছেন, আমার কোনো শত্রু নেই। যে কারণে কে এমন কাজ করেছে তা আমি জানি না।
ব্যবসায়ী সাইফুলকে র্যাব উদ্ধারের পর নিয়ে যান তাদের কার্যালয়ে। খবর পেয়ে সেখানে সাইফুলের স্ত্রী ছুটে আসেন। জানা যায়, সাভার স্মৃতিসৌধের কাছে বিসমিল্লাহ হোটেলে আসার পর সাইফুল প্রথমে তাঁর স্ত্রীকে মোবাইলে জানান। তাঁর স্ত্রী র্যাবকে বিষয়টি অবহিত করলে র্যাব তাঁকে উদ্ধার করেন।
র্যাবকে সাইফুল জানিয়েছেন, যুবকদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২২ এর মধ্যে। সংখ্যায় ছিল তারা ৭ থেকে ৮ জন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বাড়ি ফেরার সময় তাকে অপহরণ করা হয়। পরে তাঁর ম্যানেজারের কাছে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী সমগ্র নারায়নগঞ্জ জুড়ে চলে বিক্ষোভ। ব্যবসায়ী সাইফুল অপহরণ হয়েছে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ভোর থেকেই মানুষ জড়ো হতে থাকে। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন। সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে পুুলিশ সুপার আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন বিক্ষোভকারীরা। সন্ধ্যায় আবার সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে গতকাল দুপুরে সাইফুলের ম্যানেজার হান্নানকে গোয়েন্দা পুুলিশ আটক করে। রাতে যাত্রাবাড়ি থেকে নারগিস নামে আরেক মহিলাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।