দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রমজান আসতে এখনও বেশ সময় বাকি। কিন্তু রমজানের গন্ধেই যেনো ঝাঁজ বাড়া শুরু হয়েছে পেঁয়াজসহ জিনিসপত্রের। ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিআই এর এক কর্মকর্তা গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে বলেন রমজানে যাতে জিনিসপত্রে দাম সহনীয় থাকে সেদিকে খেয়াল রাথা হবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া শুরু হয়েছে রমজান রিলেটেড জিনিসপত্ত্রের দাম।
জানা গেছে, রমজানকে সামনে রেখে বেশ কিছু জিনিসপত্রের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। বাজারে গিয়ে দেখা যায় পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বেশ কিছু পণ্য ব্যবসায়ীরা মজুদ শুরু করেছে। এসব মজুদ করা পণ্য হচ্ছে ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল, ছোলা ভাঙা, খেসারির ডাল, বেসন, পেঁয়াজ, লবণ, আলু, আদা এবং দুধ।
ইতিমধ্যেই চিনির দাম বাড়া শুরু হয়েছে। দেশী চিনি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি দরে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। বিদেশী চিনি যেখানে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হতো সেটি এখন ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
আাদার দামতো এক মাস আগে থেকেই জনগণের ক্রয়ের বাইরে। আড়াইশ’ টাকা কেজিতেও আদা বিক্রি হয়েছে গত মাসে। তবে এখন খোলা বাজারে আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে রমজানে আবারও দাম বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা আশংকা করছেন।
জিনিসপত্রে দাম বাড়লে তার মাশুল দিতে হয় ক্রেতা সাধারণদের। কারণ ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করে থাকেন। আর তাই দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের কোনোই সমস্যা হয় না।
যদিও সরকার বলছে ভিন্ন কথা। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, রমজানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য এবার যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোনো কারণ নাই। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন কথা বলে। বাজারে গেলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। গত এক সপ্তাহ আগে আর বর্তমান বাজার দর বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।
অন্যসময়ের চাহিদার তুলনায় রমজান আসলে বিশেষ করে ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়ে। অন্য সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল বেশি প্রয়োজন পড়ে রমজানে। এই অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে আমদানি করা হয়ে থাকে। এই আমদানিতে ঘটে নানা সমস্যা। সময় মতো এলসি না করার কারণে অনেক সময় আমদানি দেরিতে হলে চাহিদা বাড়ে সে কারণেও দাম বাড়ে। তবে আগের অন্য অভিজ্ঞতাও রয়েছে। যেমন এসব পণ্যগুলো আমদানি করে দেশের গুটি কয়েক ব্যবসায়ী। তারা সিন্ডিকেট করে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে েদেন এমন অভিযোগও রয়েছে। এবারও যে এমন কিছু ঘটবে না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে- “রমজানে কিছু পাইকার ব্যবসায়ী পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে” অথবা “ডিও ব্যবসায়ীদের হাতেই বাজার নিয়ন্ত্রণ”। এমন খবর সাধারণ জনগণের কাছে মহা দু:সংবাদ ছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া জিনিসপত্র মজুদ করে দাম বাড়াবে সেটিই সরকারকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তবে রমজানে মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকও হয়েছে। সম্প্রতি রমজানে পণ্যমূল্য স্থির রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি জরুরি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যাতে কোনো প্রকারেই না বাড়ে সেজন্য সর্তক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং এবং পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রয়োজনে পেঁয়াজ আমদানি করার কথা বলা হয়। রমজানে যাতে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্য কেও আদায় করতে না পারে সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এফবিসিসিআইকেও বাজার মনিটরিং করার কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে মনিটরিংয়ের সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে বলে জানা যায়। কোানো ব্যবসায়ী যাতে সিন্ডিকেট করে বাজার ঊর্ধমুখি না করে সেদিকে সতর্ক্ থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে ওই বৈঠকে।
দেশের সাধারণ জনগণ এতো কিছু দেখার বা শোনার পক্ষে নয়। তারা আসন্ন রমজানে যাতে জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যে থাকে সেটিই দেখতে চাই।