দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের বাজারে বাজারজাত হওয়া কিংবা মজুদ থাকা বেশিরভাগ খাদ্যসামগ্রীই ভেজাল বলে চিহ্নিত করেছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। এই সকল ভেজাল খাদ্যসামগ্রী আমাদের শরীর এবং স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। মহাখালী পাবলিক হেলথ ইন্সটিটিউট, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিভিন্ন জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
মহাখালী পাবলিক হেলথের তথ্য অনুযায়ী দেশের বাজারজাত হওয়া খাদ্যপণ্যের মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশই ভেজাল এবং এগুলো দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জরিপ বলছে ভেজালের এই পরিমাণটি আরো বেশি তাদের মতে বাজারজাত হওয়া এই সকল খাদ্যপণ্যের ৭৯ শতাংশই ভেজাল। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিভিন্ন পরীক্ষাগার ঘুরে দেখা গিয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ খাদ্যপণ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থের মিশ্রণ রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বরাত দিয়ে জানা যায় ভেজালবিরোধী অভিযান করেও এই সকল ভোক্তা খাদ্যপণ্যের ভেজাল দূর করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।
দুধ এবং মাছে মেশানো হচ্ছে লাশ সংরক্ষণ করার ফরমালিন, ফল পাকাতে ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত কেমিকেল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সয়াবিন তেল তৈরি হচ্ছে সাবান তৈরির পামওয়েল দিয়ে, বেকারি ও মিষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক রং। চানাচুর ও জিলাপি ভাজা হয় পোড়া মবিল দিয়ে, মুড়ি ভাজা হয় ইউরিয়া সার দিয়ে এর ফলে মুড়ি দেখতে অনেক ফোলা এবং সাদা দেখায়। নানা ধরনের ফলে কেমিকেল স্প্রে করে দেওয়া হয়, যা মাসের পর মাস থাকলেও পচন ধরে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিভিন্ন অভিযানে এ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ও রং সংমিশ্রণের প্রমাণ গিয়েছে।
পরিবেশ বাচাও আন্দোলনের বরাত দিয়ে জানা যায় যে, এই সকল ভেজাল খাদ্যপণ্যের কারণে প্রতিবছর প্রায় তিনলাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় দেড় লাখ মানুষ আর কিডনী সংক্রান্ত রোগে ভোগে প্রায় ২ লাখ মানুষ। গর্ভবতী মায়েদের এই সকল খাদ্য খাওয়ার কারণে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয় প্রায় ১৫ লাখ। লাভের আশায় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে সারাদেশে এই সকল ভেজাল খাদ্যপণ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু উপযুক্ত মনিটরিং এবং খাদ্য মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় খাদ্য অফিসগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এই ভেজাল পণ্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সবচেয়ে মজার বিষয়টি হলো সন্তানের আবদার মেটাতে অভিভাবকরা যে সকল খাদ্যপণ্য কিনে দিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই ভেজাল। আইসক্রিম, জুস, চকোলেট ও আচারসহ বিভিন্ন শিশুখাদ্যের মধ্যে অধিক মুনাফার জন্য একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কাপড়ের বিষাক্ত রাসায়নিক রং, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মোটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছেন। এ তালিকায় আরো রয়েছে নিম্নমানে রং, সোডা, স্যাকারিন, মোম, আটা-ময়দা, সুগন্ধি, ট্যালকম পাউডার, পচা বরই, তেঁতুল, আম, আমড়া, ঘন চিনি ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল এই সকল খাদ্যপণ্য কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তারা রয়েছেন মারাক্তক স্বাস্থ্যঝুঁকি। কেননা এই সকল রাসায়নিক পদার্থ ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। সরকার এরিমধ্যে এই সকল ভেজাল খাদ্যপণ্য দূরীকরণে এবং অসাধু ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করলে দেশের স্বাস্থ্য সমস্যায় বড় ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল।