দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অর্থের জন্য মানুষ হেন কোনো কাজ নেই যে করতে পারে না। সেই অর্থকে পুঁজি করে আরেক ঘটনার সূত্রপাত ঘটতে যাচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে। ডাচ কোচের অভিযোগ, ব্রাজিল-ক্যামেরুনের আজকের ম্যাচ হবে পাতানো।
বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ সময় আজ মধ্যরাতে ব্রাজিল-ক্যামেরুনের খেলা রয়েছে। প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে করে এক কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল। প্রথম রাউন্ডেই যদি ক্যামেরুনের কারণে তাদের সটকে পড়তে হয় তাহলে কি অবস্থা হবে?
এমন এক পরিস্থিতিতে নাকি ক্যামেরুনের সঙ্গে দফা-রফা হয়েছে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, অনায়াসে নক আউট পর্বে ওঠা এবং পাশাপাশি পছন্দমতো প্রতিপক্ষ বাছাই করার উদ্দেশ্যে ক্যামেরুনের সঙ্গে ব্রাজিল আজ নাকি পাতানো ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটির সঙ্গে নাকি ফুটবলের বিশ্ব সংস্থা ফিফাও স্বাগতিকদের সহায়তা করছে! ব্রাজিল সম্পর্কে এমন অভিযোগ করেছেন হল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের কোচ লুইস ভ্যান গল।
ডাচ কোচ অভিযোগ করে বলেছেন, ‘নক আউট পর্বে হল্যান্ডকে এড়ানোর জন্য ব্রাজিল আজ ক্যামেরুনের বিপক্ষে পাতানো ম্যাচ খেলবে। এই ম্যাচ ব্রাজিলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জুয়াড়িরা ক্যামেরুনকে মোটা অঙ্কের অর্থও নাকি দিয়েছে। ইতোমধ্যে আসর থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজে যাওয়ায় অর্থের বিনিময়ে স্বাগতিকদের ম্যাচ ছেড়ে দিতে ক্যামেরুনেরও নাকি আপত্তি নেই।’
ভ্যান গলের এমন অভিযোগ আরও বেশি শক্ত ভিত্তি পেয়ে যায় ফিফার নিরাপত্তা প্রধান রাফ মুসকের একটি বক্তব্যের কারণে। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে ফিফার নিরাপত্তা প্রধান রাফ মুসক বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে নক আউট পর্বের ঠিক আগ মুহূর্তে কিছু কিছু দলকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের সঙ্গে জুয়াড়িদের সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন কিছু দল গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে অর্থের বিনিময়ে হেরে যাবে, তেমনি নক আউট পর্বের বিশেষ কোনো দলকে এড়াতে কোনো কোনো দল পাতানো ম্যাচের মাধ্যমে জয় নিজেদের পক্ষে নিতে পারে।’ খবর বাংলানিউজ২৪।
রাফ মুসক এবং ভ্যান গলের এমন মন্তব্যের পর ব্রাজিল বিশ্বকাপে পাতানো ম্যাচ নিয়ে নাকি হৈ চৈ পড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে। বিশ্বকাপের গত আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়ে ব্রাজিল বিদায় নিয়েছিল বলে ডাচ কোচের অভিযোগকে অনেকেই আমলে নিতেও শুরু করে দিয়েছে। কেননা এবারের নক আউট পর্বেও ব্রাজিল-হল্যান্ড মুখোমুখি হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা আছে। তবে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচ জিতলে ব্রাজিলের পক্ষে হল্যান্ডকে এড়ানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পাতানো ম্যাচের অভিযোগ হেসে উড়িয়ে দিলেন ব্রাজিলের কোচ লুইজ ফিলিপ স্কলারি।
ভ্যান গলের ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্কলারি জোর দিয়ে বলেছেন,‘ ক্যামেরুনের বিপক্ষে পাতানো ম্যাচ খেলার কোনো প্রশ্নই আসে না।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও ক্যামেরুনের আত্ম-সম্মান বলেতো একটি বিষয় থাকবে। অর্থের বিনিময়ে নিশ্চয়ই অদম্য সিংহরা তাদের সেই সম্মান হারাতে চাইবে না। এই অভিযোগ নিঃসন্দেহে ক্যামেরুনের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো ছাড়া কিছু নয়।’
অপরদিকে নক আউট পর্বে ব্রাজিল পছন্দমতো প্রতিপক্ষ বেছে নিবে সেটাই বা কি করে সম্ভব হবে? কারণ, এখনো তো এ-গ্রুপ কিংবা বি-গ্রুপ থেকে কোন দল সেরা এবং রানার্স আপ হিসেবে নক আউট পর্বে খেলবে সেটিইতো নিশ্চিত হয়নি। পাতানো ম্যাচের অভিযোগ যে বা যারা তুলছেন তারা হয় নির্বোধ, নয়তো কুচক্রী ব্যক্তি।’
ব্রাজিল কোচ স্কলারির যুক্তির বিপক্ষেও পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন ভ্যান গল। তার মতে, ‘সোমবার হল্যান্ড-চিলি ম্যাচের পর নির্ধারণ করা হয়েছে ব্রাজিল-ক্যামেরুন ম্যাচটি। ফিকশ্চারের এমন সাজানো আচরণ কি প্রমাণ করে না যে, হল্যান্ডকে এড়ানোর ব্যাপারে ব্রাজিলকে সহায়তা করতেই ফিফা এভাবে ম্যাচ সিডিউল করেছে?’
তবে ঘটনা যা্য় ঘটুকনা কোনো অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যতই থাক না কেনো। খেলার পরে না বোঝা যাবে আসলে কি ঘটেছিল। বিভিন্ন দেশেই ম্যাচ ফিক্সিং এর ঘটনা ঘটে থাকে। শুধু ফুটবল নয় ক্রিকেটেও এমন ঘটনা বার বার ঘটে যাচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে নিজ দেশের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেন কিছু খেলোয়াড়। এসব বিষয়গুলো ফিফার মতো একটি সংগঠনকে যাতে ছুঁতে না পারে সেটি কঠোরভাবে দেখা উচিত। অভিযোগ উঠলেই সেটি সত্য হবে এমন নাও হতে পারে। তবে যাতে এমন কোনো ঘটনা কখনও না ঘটে সেদিকে ফিফার আরও নজর বাড়ানো দরকার।