দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যুদ্ধের ভয়াবহতা লিখে বর্ণনা করার মতো নয়। সেই ভয়াবহতার আরো তীব্র চিত্র ফুটে উঠেছে আল জারওয়াসার পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী। রাত হলেই এক তীব্র আতঙ্ক এসে ভর করে আলা আল জারওয়াসার পরিবারের ওপর। স্ত্রী, দুই সন্তান ও অন্যান্য আত্মীয় পরিজন নিয়ে বাতি থাকা স্বত্ত্বেও ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে রাত্রিযাপন করতে হয় তাদের। কারণ আকাশে উড়ে বেড়ানো শিকারী বিমানের সার্চ লাইটের আলো খুঁজে বেরায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের।
১৯৪৮ সালের ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরাইল তাদের পশ্চিমা দোসরের সহযোগিতায় মানুষের লাল রক্তে রঞ্জিত করেছে ফিলিস্তিনিদের জনপদ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে বসবাস করতো মাত্র কয়েক হাজার ইহুদি। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা শক্তির সহযোগিতায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে গোপনে অভিবাসন শুরু হয় ইহুদিদের। তারই পরিণতি হিসেবে আজকের ইসরাইল রাষ্ট্র। এই ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনির ভেতরে প্রতিষ্ঠা করা হয় হাগানাহ নামের একটি আত্মঘাতী জঙ্গী বাহিনী। যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন বাজারে, জনসমাগম স্থানে আত্মঘাতী বোমা মেরে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা আর তাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে দেওয়া। আর এভাবেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভেতরে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যায় ইহুদিরা, তৈরি হয় ইসরাইল রাষ্ট্র। তারপর থেকেই শুরু ইসরাইলী নরপিশাচদের রক্তের হলোকাস্ট। তারপর আরো কত রক্তের নদী হয়ে গেল কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব আর মুসলিম বিশ্বের কোন পদক্ষেপই ছিল না এই রক্তের বন্যা থামানোর। এরিমধ্যে বাইরে ভারি বোমা বর্ষণ আর মর্টারের শব্দে ক্ষনে ক্ষনে কেপে উঠছে বসত বাড়িসহ আল জারওয়াসার অন্তরাত্মা। তবু বেঁচে থাকার তাগিদে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য জারওয়াসা তার পরিবারকে নিয়ে ভবনের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ায়। যে বিছানায় জারওয়াসার সন্তানরা জলপাই গাছের স্বপ্ন দেখতে দেখতে এতোদিন ঘুমাতো সেই বিছানার নিজেই আজ তাদের গুটিসুটি মেরে ভয়ার্ত রাত কাটাতে হচ্ছে। আতঙ্কগ্রস্ত জারওয়াসার বক্তব্যেই ফুটে ওঠে গাজা উপত্যকার চিত্র। গাজায় ইসরাইলী হামলার পর থেকে জারওয়াসা পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। জারওয়াসার বাসা একজন বিখ্যাত হামাস নেতার বাসা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। আর এই কারণে ওই এলাকার প্রতিটি মানুষই আতঙ্কে থাকে এই ভেবে যে হামাস নেতার বাড়িতে হামলা করতে গিয়ে এই না বুঝি তাদের বাড়িতেই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত দেড়শ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় হাজার খানেক মানুষ। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল ১১০০ বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১০০ শেল নিক্ষেপ করেছে এই কয়দিনে। প্রায় সাড়ে তিনশোর বেশি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে শেলের আঘাতে। যে কারণে আনুমানিক দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে শরণার্থী হিসেবে চলে যেতে হয়েছে। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের উপর হামলার সকল দায় দায়িত্ব অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাষ্ট্র ইসরায়েল। উল্টো তাদের দাবি, হামাসের আক্রমন প্রতিহত করতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলার দায় দায়িত্ব অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের তথ্যমতে ইসরাইলী হামলায় হতাহতের মধ্যে ৭৭ শতাংশই সাধারণ মানুষ।
অবিরত বিমান হামলা আর মর্টার শেলে কেড়ে নিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আর এই কারণেই, আল-জারওয়াসা বলেন, আমি কখনও রাত পছন্দ করি না। রাত আমাকে অনেক কষ্টের কথা মনে করিয়ে দেয় । বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রের ভেতরে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বর্তমান মুসলিম বিশ্বের ৫০টি দেশের মধ্যে ২০টিই স্বীকৃতি দিয়েছিল ইসরাইল রাষ্ট্রকে।