দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বাস করুন আর নাই করুন ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে মানুষ দিন দিন বোকা হয়ে যাচ্ছে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটি অসম্ভব কেননা ইন্টারনেটের কারণে জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী মানুষের পড়াশোনাসংক্রান্ত আচরণের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে এই তথ্যটি খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছেন, জ্ঞানের এই বিস্তৃত পরিধি আপনার জ্ঞানকে আরো সীমিত করে তুলছে।
ইন্টারনেটে একটি বিশাল ভার্চুয়াল জ্ঞানের জগৎ এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ইন্টারনেটের এই বিস্তৃত ধারার জ্ঞানমুলক কন্টেন্ট আমাদেরকে সীমাহীন তথ্যভান্ডারে বিচরণের একটি চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু অনলাইনে আপনি একটি বিষয় নিয়ে পড়তে গেলে আপনার মস্তিস্কের সম্পূর্ণ মনোযোগটি আপনি সেই পড়াতে নিবন্ধিত করতে পারেন না। যার ফলে এই পড়া থেকে আপনার অর্জিত জ্ঞানটি বলতে গেলে একেবারেই ভাসা ভাসা। ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ভ্যাল হুপার এবং তাঁর সহযোগী গবেষক চান্না হেরাথ অনলাইনে পড়াশোনা এবং অফলাইনে অর্থাৎ ইন্টারনেটের বাইরে বইপত্র, সাময়িকী ও অন্যান্য পড়াশোনার ধরন ও প্রভাব বিশ্লেষণ করে এই তথ্যগুলো প্রকাশ করেন। তারা দেখতে পান যে, ইন্টারনেটভিত্তিক পড়াশোনায় মানুষের মনোযোগের ঘাটতি রয়েছে। এতে করে যে কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে মানুষ একটু দ্রুততার সাথে আগাতে চেষ্টা করে। জ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনটি ফ্যাক্টর উপলব্ধি, তথ্যধারণ এবং স্মৃতিচারণ এই তিনটি বিষয়কে তারা এড়িয়ে যায়। বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে মনে করুন আপনারা দুইবন্ধু একই উপন্যাস পড়ছেন এই ক্ষেত্রে আপনার বন্ধুটি পড়ছে অফলাইনে অর্থাৎ বই হাতে নিয়ে আর আপনি পড়ছেন অনলাইনে ইন্টারনেট লাইব্রেরীতে। এক সপ্তাহ পর আপনাকে এবং আপনার বন্ধুটিকে এই একই উপন্যাসের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আপনার চেয়ে অনেক ভালো উত্তর দিতে পারবেন। কেননা এটি পড়তে গিয়ে পড়ার তিনটি ফ্যাক্টরকেই তিনি কাজে লাগিয়েছেন। যেটি আপনার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আপনি হয়তো পড়ার ফাঁকে একটু ফেসবুকে ঘুরে আসলেন কিংবা আপনার একটি ইমেইল আসলো। যা আপনার মনোযোগকে বিঘ্নিত করলো। অনলাইনে মানুষ নিবিড় পড়াশোনার পরিবর্তে সাধারণত দ্রুত পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হন।
ইন্টারনেটে বা অনলাইনে পড়ার সময় মানুষের মন নানাদিকে মনোনিবেশ করে যেটি একজন ব্যক্তি হাতে বই নিয়ে পড়ার সময় ঘটে না। এই গবেষণায় আরও দেখা যায়, মনে রাখার সুবিধার্থে অনেকে ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিষয় কাগজে প্রিন্ট করে নিয়ে তারপর পড়েন। এতে তাঁদের মনোযোগ বেশি থাকে। এই গবেষণার গবেষকরা মনে করেন যে, মানুষ পড়াশোনার সেই চিরায়ত পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাইতো এখনো কাগজে ছাপানো বই আর নিউজপেপার কিংবা ম্যাগাজিন পড়তে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে ইন্টারনেটের এই পড়াশোনার ব্যাপারটায় মানুষের অভ্যস্ত হতে একটা প্রজন্ম সময় লেগে যেতে পারে।