দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘তোর মায়ের চেয়ে আপন কেহ নাই যে দুনিয়ায়, মায়ের নাম মুখে নিলে শান্তি পাওয়া যায়…’। গানের এই কথাটিকে সমর্থন করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে এবার পাওয়া গেছে এমনই এক হতভাগা মায়ের সন্তানের। যারা নিজের মাকে বস্তায় ভরে ডাষ্টবিনে ফেলে গেছেন!
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন সেই মা
এমন কথা লিখতে গেলেও হাত কাঁপে। কারণ যে মা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন একটি জিনিস। সেই মাকে যারা এভাবে বস্তায় ভরে ফেলে যেতে পারে তাদের অন্তত আর যায়ই হোক মানুষ বলা যাবে না।
ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের। ৬দিন আগে ছেলে আর ছেলের বউ মিলে ছবির এই বৃদ্ধাকে আবর্জনা ফেলার বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এরপর ওই বৃদ্ধা দুদিন রাস্তায় পড়েছিলেন। পথচারীরা রাস্তার ভিক্ষুক ভেবে এড়িয়ে গেছেন। তবে বৃদ্ধার অসহায়ত্বের খবর ও ছবি নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর ইউএনও গাউছুল আজম তাকে খুঁজে বের করেন এবং নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। এখনও তিনি নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন বিভাগের ৩০৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাংবাদিকরা গেলে এখনও ওই বৃদ্ধা খোঁজ করেন তার ছেলের! মাকে ফেলে গেলো যে অমানুষ ছেলে সেই ছেলের খোঁজ করেন এখনও তার মা। তবে ওই বৃদ্ধা মা সেই সাথে কামনা করেন তাঁর রুহু যেনো এখনই উঠিয়ে নেন আল্লাহ।
স্থানীয় সাংবাদিকরা ওই বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করে তেমন কিছুই জানতে পারেননি। কোন জেলায় বাড়ি তাও তিনি বলতে পারেননি। তার নাম হাসিনা। বড় ছেলের নাম হোটন মিয়া আর ছোট ছেলের নাম লাল মিয়া। তাঁর স্বামীর নাম আবদুর করিম। এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারেননি।
ওই বৃদ্ধা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ছেলের স্ত্রীরা তাকে দুবেলা ভাত খাওয়াতেও নারাজ। পুত্রবধূদের এক কথা, তাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো যাবেনা। তার বড় ছেলে হোটন এবং তার স্ত্রী তাকে একটি বস্তায় ভরে নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছে বলে তিনি জানান। কিন্তু কীভাবে তাকে বস্তায় ভরে আনা হয়েছে তার কিছুই বলতে পারেননি। রাশেদা বেগম নামে অন্য এক মহিলা এখন ওই বৃদ্ধা মা হাসিনার দেখাশুনা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাউছুল আজম সাংবাদিকদের জানান, পত্রিকায় ছবি দেখে আমি তাকে খুঁজে বের করে হাসপাতালে ভর্তি করি। উনার চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হওয়ার পর যদি উনার সন্তানদের খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে সরকারিভাবে উনার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে যদি কেও ব্যক্তিগতভাবে উনাকে সহযোগিতা করতে চাইলে হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন।
একজন অসহায় মা। সন্তানকে মানুষ করে এতো বড় করেছেন। যে সন্তানের জন্য দিন নাই রাত নাই পরিশ্রম করেছেন। গায়ের ঘাম মাটিতে পড়েছে যে সন্তানের জন্য। সেই সন্তান এখন বড় হয়ে মাকে ভুলে গেছেন! বড়ই করুণ এই পৃথিবী আর পৃথিবীর মানুষ। স্বার্থের কাছে পৃথিবীর সকল দয়া-মায়া মহব্বত আপন পর সবই কি ভুলুণ্ঠিত? যেই মায়ের জন্য আমরা পৃথিবী দেখেছি সেই মায়ের কি এতটুকুও অসম্মান হতে দেওয়া যাবে?