দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কাগজের নোট ছিঁড়ে-ফেটে গেলে বা বিনিময়ের অযোগ্য হয়ে পড়লে সে নোট বদলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকেও বদলে দেওয়ার নির্দেশনা থাকলে বেশিরভাগ ব্যাংক ছেঁড়া-ফাটা নোট বদলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে থাকে।
বিভিন্ন সময় তফসিলি ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহকরা বিড়ম্বনার শিকার হন। কারণ বেশির ভাগ ব্যাংকই ছেঁড়া-ফাটা টাকা বদলে দিতে চান না। বাংলাদেশ ব্যাংকে কথা বললে, তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে যান। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যদিও প্রতিটি ব্যাংকেই লেখা রয়েছে, ‘ছেঁড়া-ফাটা টাকা বদল করা হয়’, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ উল্টো।
ছেঁড়া নোট নিয়ে বিপত্তি ॥ পড়ে থাকে বছরের পর বছর
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় এসব বিনিময় অযোগ্য নোট বদল করে দেওয়া হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে যেসব ছেঁড়া-ফাটা নোট জমা পড়ে, সেগুলোরও শেষ গন্তব্য ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’, এভাবে সারা দেশ থেকে আসা অসংখ্য পুরনো ব্যাংক নোট বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় এসে জমা হয়। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে নোটগুলো ধ্বংস করতে না পারায় সেগুলোকে বাক্সবন্দি করে ফেলে রাখা হয় দীর্ঘদিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাক্স খুলতে লেগে যায় তিন বছরেরও বেশি সময়!
এমনিতেই বিনিময়ের অযোগ্য, তারপর দীর্ঘদিন ধরে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকায় নোটগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে লেগে যায়। বাক্স কতগুলো নোট রয়েছে, তা গোনাটাও তখন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে (কেননা অধিকাংশ ছেঁড়া নোট আঠা দিয়ে জোড়া দেওয়া থাকে), ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেওয়া হিসাব মেনে নিয়ে নোটগুলো ধ্বংস করতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। গত ৪০ বছরে এ বিপত্তি থেকে বের হতে পারছিল না সংস্থাটি। দেরিতে হলেও এ থেকে বের হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন সংস্থাটির নীতিনির্ধারকরা। ময়মনসিংহ জেলায় নিজস্ব জমিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে শাখাটি খুলতে চেষ্টা করছে, যেখানে বসানো হবে বিদেশ থেকে আনা অত্যাধুনিক মেশিন। এতে হাতের স্পর্শ ছাড়াই টাকার বাক্স ওঠা-নামা, নোট গোনা, বিনিময় অযোগ্য নোট ধ্বংস করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হবে মাত্র এক ঘণ্টায়। শাখাটির জন্য জমি কেনার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি ময়মনসিংহ শহরের একটি ভবন ভাড়া নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন শাখাটির কর্মকর্তারা। শাখাটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো, জয়দেবপুরের (বর্তমান গাজীপুর) টাকশাল থেকে নতুন টাকা (ছাপানো টাকা, তবে ইসুকৃত নোট নয়) পাঠিয়ে দেওয়া হবে ওই শাখাটিতে। ইস্যু করার পর টাকাগুলো সেখান থেকেই চলে যাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার চাপ কিছুটা কমে আসবে। ময়মনসিংহ শাখা নিয়ে এমন পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
ময়মনসিংহ শহরের ২৯ দুর্গাবাড়ী রোডের হৃদয় টাওয়ারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এ শাখাটি আপাতত কাজ চালাবে। গত মাসের ১৭ ডিসেম্বর থেকে শাখাটি কাজ শুরু করেছে। সহকারী পরিচালক থেকে মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের ৮৭ কর্মকর্তাসহ মোট ১২২ কর্মকর্তা-কর্মচারী শাখাটিতে কাজ করছেন। তবে স্থান ও আবাসন সংকুলান না হওয়ায় এখনো অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী শাখাটিতে যোগ দিতে পারেননি বলে জানা গেছে। অবশ্য খুব দ্রুত শাখায় সব কর্মকর্তার বসার স্থান হয়ে যাবে বলে আশা করছেন শাখাটির কর্মকর্তারা। ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের উপস্থিতিতে শাখাটি চালু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য অতিথিরাও থাকবেন বলে জানান শাখার কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাকি শাখাগুলো হলো- মতিঝিল শাখা, সদরঘাট শাখা, চট্টগ্রাম শাখা, রাজশাহী শাখা, খুলনা শাখা, সিলেট শাখা, বগুড়া শাখা, বরিশাল শাখা ও রংপুর শাখা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এ শাখায় ইতিমধ্যে চারটি বিভাগ স্থাপন করা হয়েছে। বিভাগগুলো হলোথসংস্থাপন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন-১, ব্যাংক পরিদর্শন-২ এবং এসএমই ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগ। বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন শাখায় ইতিমধ্যে বেশ ভালোভাবেই কাজ শুরু হয়েছে। এখানে পাঁচ-ছয়টি তলা নিয়ে অফিস করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের বসার রুম, ডেস্ক স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি কাজও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
বছরে কী পরিমাণ পুরনো নোট জমা পড়ে, তার কোনো সঠিক হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ময়মনসিংহ শাখা উদ্বোধনের আগে ব্যতিব্যস্ত হয়ে এ হিসাব কষা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মুদ্রা কর্মকর্তা (কারেন্সি অফিসার) মো. সাইফুল ইসলাম খান।
পুরনো টাকা বদলানোর নিয়মকানুনেও সম্প্রতি কিছু পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১০ ডিসেম্বর বিকৃত, ছেঁড়া, পোড়া নোট বদলানোর বিষয়ে ১৯৭৬ সালের নিয়ম (প্রবিধান) বদলে নতুন এ নিয়ম জারি করা হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিকৃত নোট বদলের জন্য অবশ্যই নোটটির অর্ধেক অংশ (৫০ ভাগ) অক্ষত থাকতে হবে। নোটের ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ অংশ অক্ষত থাকলে বাহক নোটের মূল্যমানের অর্ধেক মূল্য ফেরত পাবেন। আর নোটের ৭৬ থেকে ৯০ শতাংশ অংশ অক্ষত থাকলে ফেরত পাবেন ৪ শতাংশের ৩ শতাংশ মূল্য। ৯০ শতাংশের বেশি অংশ অক্ষত থাকলে পুরো মূল্যই ফেরত পাবেন বাহক। (সৌজন্যে: দৈনিক কালের কণ্ঠ)।