দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ থ্রিডি সিনেমায় যখন মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে জুতা ফ্যাশনেও। আর তাই এবার জুতাও আসছে থ্রিডি।
জুতাও ফ্যাশনের জগতে এক বিশেষ স্থানেই রয়েছে এটা আমরা সবাই জানি। ঈদ পরবে নতুন জুতা না হলে যেনো আনন্দের অর্পূণতা আসে না। আর ছোট ছেলে-মেয়েদের সবসময় নতুন জামার পাশাপাশি নতুন জুতা না হলে তো হয়ইনা। আবার মহিলাদের ডজন-ডজন জুতা থাকা সত্ত্বেও হালফ্যাশানের জুতা দেখলেই তাদের কিনতে ইচ্ছে করে। আর ফ্যাশন পাগল মানুষের চাহিদা মেটাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের অভিনব ডিজাইনের জুতা তৈরি করা হয়ে থাকে।
আবার প্রতিটি কোম্পানি পণ্য ভিন্নমাত্রায় ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করতেও প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু সেই জুতা যদি হয় থ্রিডি তাহলে কেমন হবে? এ কথা শুনলে হয়তো অনেকেই বিশ্বাসও করতে চাইবেন না। আবার জুতাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অনেকেই পাগলের প্রলাপ বলে মনে করতে পারেন।
বিষয়টা অবিশ্বাস্য হলেও একদম সত্যি। এমনই এক ধরনের জুতা তৈরি করেছেন সুইডিস এক ফ্যাশন ডিজাইনার। এই প্রযুক্তিতে একজোড়া ত্রিমাত্রিক হাইহিল বানাতে সময় লাগবে প্রায় চল্লিশ ঘণ্টা। আর এই জুতা জোড়ার দাম পড়বে কয়েক হাজার ডলার। তবে দাম বেশি হলেও সমস্যা নেই। কারণ মহিলাদের ফ্যাশনের জুতা বলে কথা।
সুইডিশ ফ্যাশন ডিজাইনার নাইম ইয়োসেফির তৈরি করেছেন এই জুতা। এই জুতার মডেলটির নাম ‘মেলোনিয়া’। উৎপাদন পদ্ধতিই হলো এই ধরনের জুতার এক বিশেষত্ব। এই হাইহিল জুতা জোড়া তৈরি হয়েছে পলিয়ামিড দিয়ে। আর এগুলো নাকি এসেছে থ্রিডি প্রিন্টার থেকে।
ডিজাইনার নাইম ইয়োসেফি বলেন, ‘থ্রিডি প্রিন্টিং সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই কোনো ছিল না। আমি একটি অরগানিক আকার সৃষ্টি করার উপায় খুঁজছিলাম। আর ঠিক তখন আমি এই নতুন ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ পদ্ধতির কথা জানতে পারি। এই থ্রিডি প্রিন্টিং একটা খুব উচ্চমানের প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন আকৃতি তৈরি করা সম্ভব।’ জন্মসূত্রে ইরানের নাগরিক নাইম ইয়োসেফির চোখে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি হল ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ‘জুতা আবিষ্কার’।
পরীক্ষামূলকভাবে জুতা তৈরির জন্য এই থ্রিডি নকশাটা হয়েছিল কম্পিউটারে। তারপর স্টকহোমের বিশেষজ্ঞ মিকায়েল এরিকসন সেই নকশা ‘অপটিমাইজ’ করেন। একটি বিশেষ সফটওয়্যার এই জুতোর ডিজিটাল মডেলটিকে সিগন্যালে পরিণত করে, আর এ থেকেই থ্রিডি প্রিন্টার ত্রিমাত্রিক মডেলটি তৈরি করে। তবে ত্রিমাত্রিক এই মুদ্রণে অনেক বেশি সময় লাগে। এই প্রণালীটি ঠিক কাগজে ছাপার মতো। শুধু কালির বদলে তরল প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই প্লাস্টিক আবার একটি লেজার থেকে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণে শুকিয়ে যায় ও শক্ত হয়ে ওঠে। তারপর স্তরে স্তরে ছাপা হয় এগুলো। সবস্তর কাগজের চেয়েও অনেক পাতলা। মাত্র ১৬ মাইক্রন অর্থাৎ এক মিলিমিটারের ১৬ হাজারের এক ভাগ। আর এ থেকেই বোঝা যায় যে, একটা জুতা তৈরি করতে কেন চল্লিশ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। ওরকম একটা জুতো তৈরি করতে নাকি খরচ লাগে দেড় হাজার ইউরো। অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার থ্রিডি প্রিন্টার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। প্রথমে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নাইম ইয়োসেফির ‘মেলোনিয়া’ মডেলটিকে বিভিন্ন মিউজিয়ামে দেখা যাবে। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম ইতিমধ্যে জুতাটি নিতে বেশ আগ্রহও প্রকাশ করেছে।
তবে ভবিষ্যতে এই জুতা কম খরচে যাতে তৈরি করা যায় সেদিকেই নজর দিচ্ছেন উৎপাদনকারী ডিজাইনার নাইম ইয়োসেফি। তার আশা, এই থ্রিডি জুতা এক সময় ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়। আর সেদিন তার পরিশ্রম সার্থক হবে।