দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবার বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা এক বিস্ময়কর আবিষ্কার করলেন। সেটি হচ্ছে সৌরশক্তির প্রজাপতি ‘জঙ্গলগ্লোরি’। বান্দরবানের থানচি এলাকার গহীন বনাঞ্চলে এ বিরল সৌরশক্তি সমৃদ্ধ প্রজাপতিটি শনাক্ত করা হয়। এই প্রজাপতিটি সৌরশক্তির প্লান্টগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে।
প্রজাপতির কথা সবারই মনে থাকার কথা। কারণ ছোটবেলায় রঙিন প্রজাপতি ধরার জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন অনেকেই। তাইতো প্রজাপতির পাখার পেছনে ছুটে শৈশব কাটানোর কথা কি কেও কখনও ভুলতে পারেন? কিন্তু এবার বড় বেলায় প্রজাপতি পিছে ছুটে বেড়িয়েছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দীর্ঘদিন বনে-বাঁদাড়ে প্রজাপতির পেছনে পেছনে ছুটে আবিষ্কার করেছেন সৌরশক্তির প্রজাপতি যার নাম দিয়েছেন ‘জঙ্গলগ্লোরি’।
প্রজাপতি আবিষ্কার করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন। প্রজাপতির ওপর বিশেষ আকর্ষণের কারণে প্রজাপতির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। তৈরি করেছেন প্রজাপতির এক বাগান। যে কারণে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন গবেষণা করে শতাব্দীর প্রাচীন সৌরশক্তিসমৃদ্ধ এক প্রজাপতি শনাক্ত করেছেন। ১৩২ বছর পর বাংলাদেশে এই প্রজাপতির সন্ধান মিললো। প্রজাপতির নাম ‘জঙ্গলগ্লোরি’। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘থাউমেনটিস ডিওরিস’।
এ বছর ৩০ মার্চ ড. মনোয়ার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের ‘প্রজাপতি বিষয়ক গবেষণা দল’ নিয়ে বান্দরবানের থানচি এলাকার গহীন বনাঞ্চল হতে এই বিরল সৌরশক্তিসমৃদ্ধ প্রজাপতিটি শনাক্ত করেন।
জানা যায়, ১৮৪৫ সালে সিলেটে প্রথম এই প্রজাপতি শনাক্ত করেন ডাবলডে নামে এক বিজ্ঞানী। এরপর ১৮৮২ সালে ব্রিগেডিয়ার মার্শাল এবং নেসেভিলে আবার সিলেটের বনাঞ্চল হতে দ্বিতীয়বার এটি শনাক্ত করেন। এরপর পার হয়ে গেছে ১৩২ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে এদেশে অন্য কোনো দেশী বা বিদেশী গবেষক দল এটিকে শনাক্তকরণের কোনো রেকর্ড নেই।
ড. মনোয়ার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই প্রজাপতির ডানার দৈর্ঘ্য ৯৫-১১৫ মিলিমিটার। এই প্রজাপতিটি দেখতে গাঢ় বাদামি রঙের। উপরের পাখায় উজ্জ্বল গাঢ় নীলাভ রঙের রশ্মির মতো দুটি ছটার বিচ্ছুরণ চোখে পড়ে। প্রজাপতিটি জঙ্গলের পাতা ও ছোট ছোট কাণ্ডের মাঝখান দিয়ে উড়ে বেড়ায়। বাংলাদেশে এই প্রজাপতির জীবনচক্র এবং অন্যান্য জৈবিক কার্যক্রম এখনও অজানা।
ড. মনোয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩০০টিরও বেশি প্রজাতির প্রজাপতি আবিষ্কার হয়েছে। আমাদের দেশে অনেক প্রজাপতি আছে- যেগুলো আবিষ্কার এবং গবেষণার মাধ্যমে দেশের সৌরশক্তির প্লান্টগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে দেশকে সমৃদ্ধও করতে পারি।’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে জাপান এবং চীনের একদল বিজ্ঞানী এই প্রজাতির প্রজাপতি নিয়ে সৌরশক্তি বিষয়ক এক গবেষণা করেন। তারা দেখতে পান যে, এই প্রজাপতির পাখার স্কেলের গঠন এবং রঙের সৌরশক্তি ধারণ ও তা হতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। যা তাদের অতি দ্রুত ওড়ার জন্য এবং মাংসপেশি সঞ্চালনের জন্য বিশেষ সহায়ক। বিজ্ঞানীরা এই প্রজাপতির পাখার স্কেলের গঠন এবং রঙের বিন্যাসকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র ও অন্যান্য সৌরশক্তি প্লান্টে ব্যবহারের জন্য কাজ করে চলেছেন। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা সফলতাও অর্জন করেছেন। আমাদের দেশেও এটি কাজে লাগানো যেতে পারে।