এম. এইচ. সোহেল ॥ শাহবাগ থেকে বাংলাদেশ- এমনই অবস্থা দাঁড়িয়েছে সামপ্রতিক তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। শাহবাগে মাত্র ক’জন ব্লগারের উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত গণজমায়েত এবং তা ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশের শহর-গ্রাম-গঞ্জে। এমনকি এই আন্দোলন এখন বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে।
কেনো এই আন্দোলন?
এই প্রশ্নটির উত্তর হয়তো অনেকেই জানেন। কারণ এদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারতো হয়ইনি বরং বিভিন্ন সময় তাদের স্বাধীন দেশে মন্ত্রীত্ব দেওয়া হয়েছে। এদেশের জনগণ সেই সব কাহিনী ৪২ বছর ধরে দেখে আসছে। একাত্তরে যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচারের দাবি মানুষের মনে থাকলেও রাজনৈতিক কারণে তা প্রকাশ পায়নি সেভাবে। আর তাইতো এবার শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটছে। মানুষ এখন তরুণদের উদ্যোগে উদ্বেলিত। একাত্তরের চেতনা যারা এ যাবত কাল হৃদয়ে ধারণ করে আসছিলেন আজ তারা শাহবাগের তরুণদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে। শাহবাগের এই আন্দোলন এখন শুধু শাহবাগের সীমাবদ্ধ নেই। এই আন্দোলন এখন সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এমনকি ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারেও বিক্ষোভ করেছে প্রবাসী বাঙালিরা।
আজ জনগণের মধ্যে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে সোচ্চার উচ্চারণ হচ্ছে এতো দিন তা চোখে পড়েনি। এদেশের মানুষ শুধু হৃদয়েই ধারণ করেছে। কিন্তু ফুসে উঠেছে। ফুসে উঠেছে দেশের জনগণ। কারণ একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা বর্তমানে এদেশে যেভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যতে এদেশকে তারা তালেবানি রাষ্ট্র বানাতে চাই। একাত্তরে লক্ষ কোটি মানুষের রক্ত আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি নাগরিকের।
কত দিন চলবে এই আন্দোলন?
শাহবাগের গণজমায়েত অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গণমানুষের আন্দোলন আর কতদিন চলবে তার কোন সময় সীমা নেই। আন্দোলনকারীরা বলছেন, যতদিন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হচ্ছে এবং যতদিন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা হচ্ছে ততদিন এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে বলা হচ্ছে। আন্দোলনকারী এমন উচ্চারণও করেছেন তা হলো, ‘‘এদেশ স্বাধীন হয়েছে ৯ মাসের যুদ্ধে প্রয়োজনে আমরা বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন করে দাবি আদায় করে তবেই ঘরে ফিরবো’’।
শুধুই কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি?
শুরুতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করা হলেও দেশের সার্বিক বিবেচনায় আন্দোলনকারীরা জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা পরিচালিত তাদের আয়ের উৎস্য ইসলামী ব্যাংক লিঃসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বন্ধের দাবি জানায়। কারণ জামায়াতে ইসলামে এদেশের ৪র্থ শ্রেণীর রাজনৈতিক দল হলেও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখে বোঝা যায়, তারা এই সন্ত্রাস খাতে ব্যাপক অর্থ যোগান দিয়ে থাকে। এই অর্থগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী ব্যাংক লিঃ, ইবনে সিনাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আসে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই তাদের অর্থ উপার্জনের উৎস্য বন্ধের জন্যও দাবি জানানো হচ্ছে।
জনগণের প্রত্যাশা
জনগণের একটি প্রত্যাশা আর তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। শুধু বিচার নয় সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। স্বাধীনতার সময় জামায়াতে ইসলামী এদেশের জনগণের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা কেও ভুলে যায়নি। পাক হানাদার বাহিনীকে খুশি করতে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘণ্যতম ঘৃণ্য অপরাধ তারা সেদিন করেছিল। সেই ঘণ্য অপরাধের শাস্তি আজ জনগণের একান্ত প্রত্যাশা। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিও আজ জনগণের প্রত্যাশা। এদেশের জনগণ রাজাকারমুক্ত স্বাধীন দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। হিংসা, হানাহানি ও সন্ত্রাসের রাজত্ব দেখার জন্য এদেশ স্বাধীন করা হয়নি। তাই জনগণের প্রত্যাশা বর্তমান সরকার যেহেতু স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি তাই তাদের উচিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত এবং যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ ও তাদের আয়ের উৎস্য বন্ধ করা।