দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খুব কম সময়ের মধ্যে তিনটি রায় জামায়াতকে বিচলিত করে তুলেছে। আগের রায়ে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড মওকুফ হওয়ার পর দলটি বেশ উৎফুল্ল ছিল। কিন্তু নিজামী ও মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড ও কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায় একই সময় হওয়ায় দলটি বেশ উদ্বিগ্ন।
বুধবার রায় দেওয়া হয় জামায়াতে ইসলামী মতিউর রহমান নিজামীর। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। অপরদিকে রবিবারের রায়ে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আর আজ সোমবার আপিল বিভাগে কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরপর দুটি ফাঁসির রায় এবং আবার আজই আরেকটি চূড়ান্ত রায়ের ঘোষণায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে জামায়াত-শিবির। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন হতাশার কথায় প্রকাশ পেয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরীর এক নেতার উদ্বৃতি দিয়ে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বলেছে, ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সংকট এখন মোকাবেলা করছে জামায়াতে ইসলামী। ৭ দিন ধরে অসম্ভব প্রেসার যাচ্ছে আমাদের নেতাদের। চাপে পড়েছে পুরো সংগঠন। আবার কামারুজ্জামান সাহেবের মামলায় চূড়ান্ত আপিলের রায়। মনে হচ্ছে, আমরা শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার মতো আরেকটি ঘটনা দেখতে পাচ্ছি।’
গত ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এই রায়গুলো দলটিকে আরও বিচলিত করে তুলেছে। ইতিমধ্যে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আবার আজ সোমবার সর্বোচ্চ আদালত দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলার চূড়ান্ত রায়েও ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন। এতোগুলো মাস ধরে ঝুলে থাকা রায়গুলো পরপর কেন হচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরাও বুঝে উঠতে পারছে না। আবার পাচ্ছে না কোনো দিকনির্দেশনাও।
রায় ঘোষণার পর থেকে হরতাল দিলেও সেসব হরতালও ঢিলেঢালাভাবেই পালিত হচ্ছে। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে জামায়াতে ইসলামী সুবিধা করতে পারছে না। নাটোরে দলের নায়েবে আমির ঘোষণা করেছিলেন, ‘আর কোনো মৃত্যুদণ্ড হলে টানা হরতাল’ সেটিও মীর কাসেমের রায় ঘোষণার পর ঠিক থাকেনি। শুধু একদিন বৃহস্পতিবার হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াত। এমন অবস্থায় বর্তমানে দলটি অস্তিত্বের সংকটের মধ্যে রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা ক্রমেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে।
জামায়াতে ইসলামীর একজন মজলিসে শূরা সদস্য’র উদ্বত করে একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘আমরা জানি না সরকার কেনো এতো দ্রুত রায় দিচ্ছে। সরকার হয়তো চাচ্ছে রায়গুলো দিলে নেতাকর্মীরা সহিংস হয়ে উঠবে। আর তখন সরকার বহির্বিশ্বকে দেখাতে পারবে বাংলাদেশে জঙ্গি আছে। কিন্তু নেতাকর্মীরা বুঝে-শুনেই সামনের দিকে এগুবে।’
যা হোক আজকের রায়ের পর বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। কারণ আগের রায়ে অর্থাৎ দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর রায় যখন কমে যায় তখন জনগণের মধ্যে একটি বদ্ধ ধারণা হয়েছিল যে, ‘সরকারের সঙ্গে জামায়াতের কোনো গোপন আঁতাত রয়েছে’। কিন্তু এর পরের দুটি রায় নিজামী, মীর কাসেম ও কামারুজ্জামানের রায় সেই হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এখন সময়ই বলে দেবে আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে। আর তারজন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে জনগণের একটায় প্রত্যাশা, আর তা হলো দেশে শান্তি-শৃংখলা যাতে কোনো মতেই বিগ্নিত না হয়।