দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর খবরে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আগামী জানুয়ারি থেকেই বর্ধিত এই বোঝা বইতে হবে জনগণকে। অবশ্য এর আগে ডিসেম্বরে গণশুনানি করবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
আবারও জনগণের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে। বর্তমান দামের থেকে ডবলেরও বেশি বাড়ানো হবে গ্যাসের দাম। অপরদিকে আবারও বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে। সব মিলিয়ে জনগণ এখন চোখে সরষের ফুল দেখছেন। এই দাম বাড়ানো হবে আগামী জানুয়ারি থেকেই। অবশ্য ডিসেম্বরে গণশুনানি করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বিইআরসি বলেছে, ‘দেশের এই খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বছরে একবার করে দাম সমন্বয় করে ভর্তুকি হতে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য বছরের শুরুতেই নতুন দাম নির্ধারণ করবে বিইআরসি।’
বলা হয়েছে, ‘এর আগে গত অক্টোবরে গ্যাস ও বিদুতের দাম বাড়াতে বিইআরসিতে প্রস্তাব জমা দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পেট্রোবাংলা। তবে ওই সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলো পৃথক পৃথক প্রস্তাব জমা না দেওয়ায় সেটি ফেরত পাঠায় বিইআরসি। এ ছাড়া পিডিবির পাঠানো প্রস্তাবেও তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে সেটিও ফেরত পাঠানো হয়।’
বিইআরসি’র এক কর্মকর্তা জানান, ‘প্রস্তাব ফেরত পাঠালেও নতুন করে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য পিডিবি ও পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ডিসেম্বরে পিডিবি এবং পেট্রোবাংলার নতুন প্রস্তাবের গণশুনানি সম্পন্ন করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হবে।’ এটি ১ জানুয়ারি হতে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে আবাসিক খাতে:
# ২ চুলার বর্তমান দাম ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা।
# ১ চুলা বর্তমান দাম ৪০০ টাকা হতে ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
# ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১ হাজার ঘনফুট গ্যাসের বর্তমান দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা হতে ২৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
# প্রতি ১ হাজার ঘনফুট সিএনজির বর্তমান দাম ৮৪৯ টাকা ৫০ পয়সা হতে বাড়িয়ে ১ হাজার ১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা।
# সার কারখানায় ৭২ টাকা ৯২ পয়সা হতে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
# আবাসিকে মিটারের ক্ষেত্রে প্রতিহাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা হতে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করা হবে।
# বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিহাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জন্য ৭৯ টাকা ৮২ পয়সা হতে বাড়িয়ে ৮৪ টাকা।
# বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২৬৮ টাকা ০৯ পয়সা হতে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা।
# শিল্প গ্রাহকদের ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা হতে বাড়িয়ে ২২০ টাকা।
# চা বাগানের ক্ষেত্রে ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা হতে বাড়িয়ে ২০০ টাকা।
অপরদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে, আগামী বছরের শুরু হতে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৮১ পয়সা বাড়ানো জন্য প্রস্তাব পাঠায় পিডিবি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৭০ পয়সা হতে বেড়ে ৫ টাকা ৫১ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে বিইআরসি বলছে, ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্যই দাম বাড়ানোর এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা কমে আসবে। দাম বাড়ানো না হলে চলতি বছরে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।
এই দাম বৃদ্ধির ফলে প্রভাব পড়বে অন্যান্য সেক্টরেও। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের চরম মাশুল দিতে হবে। কারণ এক ধাপে সাড়ে ৪শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা বৃদ্ধি সকল রেকডও অতিক্রম করবে। দাম বাড়লে সাড়ে ৪শ’ থেকে হয়তো ৬শ’ টাকা হতে পারতো। কিন্তু সরকার তা না করে এক ধাপে ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করা হলে তারা বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়তেই পারে, তাই বলে এক ধাপে ডবলেরও বেশি! এটি কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য হবে না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর জনগণ মুখ বুজে ছিল। কিন্তু এভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনগণ ফুসে উঠবে। সেটি সরকারের সামাল দেওয়া কঠিন হবে। কারণ জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।’