দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাসের পর মাস, বছরের পর ধরে স্বর্ণ চোরাচালান হয়ে আসছে। এর সঙ্গে বিমানের কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জড়িত বাইরে থেকে শোনা গেলেও বাস্তবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল সবাই। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানের ডিজিএমসহ ৫ জন ৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়তে পারে।
স্বর্ণ চোরাচালান ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ধরা পড়ছে একটি করে চালান। এর বাইরে আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে আরও কত স্বর্ণ অবৈধভাবে প্রবেশ করছে তার কোনই হিসাব নেই। তবে প্রতিবার হয়তো দু’একজন চোরাচালানীকে গ্রেফতার করা হয়। তাছাড়া প্রতিবারই শুধু সোনা উদ্ধার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এবার মূল চক্রের সন্ধ্যান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ আর তাই বিমানের কর্মকর্তাও ধরাশায়ি হয়েছেন। স্বর্ণ চোরাচালানীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদুল ইসলামসহ ওই সিন্ডিকেটের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে ৪ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি উত্তরের এএসপি মীনহাজুল ইসলাম। ঢাকা মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ শুনানি শেষে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরা হলেন- বিমানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিজিএম-ফ্লাইট সার্ভিস) মো: এমদাদ হোসেন, প্ল্যানিং এ্যান্ড সিডিউলিংয়ের প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মো: আসলাম শহীদ, সিডিউলিং ম্যানেজার মো: তোজাম্মেল হোসেন, বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ এবং ফারহান মানি একচেঞ্জের মালিক মো: হারুন অর রশীদ। গতপরশু মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘১২ নভেম্বর বিজি-০৪৬ ফ্লাইটে বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল আফসার রাসেলকে দুই কেজি ৬০০ গ্রাম স্বর্ণসহ গ্রেফতার করে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তাকে গ্রেফতারের পর বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়। এ্ররপর এর তদন্তভার দেওয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। রাসেলকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নাম চলে আসে।’
তদন্তে বিমানের অনেক কর্মকর্তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্তে গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও অনেকের নামই চলে এসেছে। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, তদন্তে যার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকেই গ্রেফতার করা হবে।’
গ্রেফতারকৃত বিমান কর্মকর্তাদের বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা বিমানের সিডিউল তৈরি করতো। এমনকি বিমানে কার কখন দায়িত্ব থাকবে ও কি দায়িত্ব থাকবে তারা নির্ধারণ করতো। স্বর্ণ চোরাচালান নিরাপদে বাইরে বের করে আনতে বিভিন্ন পর্যায়ে কার কি ভূমিকা থাকবে তাও তারা নির্ধারণ করতো।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুবাই প্রবাসী বাংলাদেশী শফিউল আলম মিন্টু এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো। ওই শফিউল দুবাই হতে স্বর্ণ কিনে বিমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজোসে তা বাংলাদেশে পাঠাতো।’
ধারণা করা হচ্ছে, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা হতো। রিমান্ডে নিলে এরসঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। হয়তো থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে পারে। কারণ এক চক্রটিই দীর্ঘদিন যাবত হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছে।