দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাত্র ক’দিন আগেই বিশ্ব নারী দিবস পালিত হয়ে গেলো। নারীদের অধিকার আদায়ে বিশ্ববাসীর সঙ্গে বাংলাদেশও একাত্ম। অথচ এখনও এদেশের নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার। তারা পুরুষদের সমান কাজ করেই মজুরি পাচ্ছেন অর্ধেক!
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারী শ্রমিকরা বছরের পর বছর মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একই কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমান কায়িক পরিশ্রম করেও পারিশ্রমিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দারুণভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। বাধ্য হয়েই নারী শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম চলছে পরিহাস ও প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী হয়ে। অগ্রসরমান নারী নীতিতে নারীদের সমান অধিকারের বিষয়টির বাস্তবায়ন প্রায় অনুপস্থিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মজীবী নারীদের মধ্যে কৃষিকাজ ও ধান চাতালের শ্রমিক হিসেবে অনেকে কর্মরত। পুরুষদের পাশাপাশি নানা কাজে কর্মরত রয়েছে বহু নারী শ্রমিক। সমান পরিশ্রম করলেও মজুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন এসব নারী শ্রমিকরা।
উত্তরাঞ্চলের একটি ধান-চাতালের নিয়মিত শ্রমিক আদুরী বেগম জানান, পুরুষ শ্রমিকদের মতই প্রতিদিন ধানে পা দেওয়া, চাতাল ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করি। আর মজুরির সময় আমরা পুরুষের অর্ধেক মজুরি পাই। নারী কৃষি শ্রমিকরা জানান, কাজের ধরন অনুসারে কৃষি কাজে নিয়োজিত পুরুষ শ্রমিকরা প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করে থাকে। একই কাজ নারী শ্রমিকদের দিয়ে করানো হয় মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। তাদের প্রশ্ন কেনো এই বৈষম্য?
জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা এ অন্যায় ও অযৌক্তিক নিয়ম মেনে নেন বলেও জানান তারা। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বহু আদিবাসী নারী শ্রমিক কৃষি উৎপাদনে সরাসরি সম্পৃক্ত। তারা ধান রোপণ, পরিচর্যা ও মাড়াই থেকে শুরু করে সবজি ফসলের মাচা তৈরি ও পরিচর্যার কাজ করে থাকে। বিশেষ বাজারজাতকরণেও এসব আদিবাসী নারী শ্রমিক প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। তারপরেও তাদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। সাধারণ নারী শ্রমিকদের চেয়েও তাদের দেওয়া হয় কম মজুরি।
কায়িক পরিশ্রম করেও এসব নারীরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। কিন্তু কে নিশ্চয়তা দেবে তাদের? কে এগিয়ে আসবে তাদের পাশে। বৈষম্যের বিষয়টি এসব নারী শ্রমিকরা জানলেও এক প্রকার বাধ্য হয়েই কাজ করে চলেছেন। দেশের কৃষি সেক্টরসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে এসব নারী শ্রমিকদের ভূমিকা বিশেষ অবদানের হলেও তার কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এক শ্রেণীর মুনাফাখোরদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে এসব নারী শ্রমিকরা। কারণ মজুরি নিয়ে কোন কথা বললে হারাতে হয় কাজ। আর তখন না খেয়ে দিনাতিপাত করা ছাড়া তাদের কোন গত্যন্তর নেই। আর তাই বাধ্য হয়েই এই বৈষম্যমূলক আচরণ মেনে নিচ্ছে আমাদের দেশের নারী শ্রমিকরা। আসুন বিশ্ব নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো সমাজের সামনে তুলে ধরি এবং নারীদের প্রকৃত অধিকার আদায়ে আমরা সকলেই প্রচেষ্টা চালায়।