দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘জন্মিলে মরিতে হয়’ এটি একটি চির সত্য। কিন্তু সেই মৃত্যু আর পাকিস্তানে অবোধ শিশুদের মৃত্যু একেবারেই ভিন্ন। এই নির্মম মৃত্যু ঘটেছে ১৪১ জনের। এই নির্মমতার পর শোকে কাতর পুরো পাকিস্তান।
পেশোয়ারের এই নির্মমতার পর শোকে কাতর পুরো পাকিস্তান। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের সেনাবাহিনীর স্কুলটির শ্রেণিকক্ষজুড়ে এখনও রয়েছে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। কয়েক দিন পর হয়তো এই রক্তের দাগ সেখানে থাকবে না। কিন্তু ভয়াবহ নির্মম ওই ঘটনায় মানুষের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা হয়তো সহজেই মুছবে না। এই দুঃসহ স্মৃতি তাদের হয়তো তাড়া করে ফিরবে জীবনের বাকি দিনগুলোতে।
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবানের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৪১-এ। নিহতদের মধ্যে ১৩২ জনই আবার শিশু। বাকিরা সবাই স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ৭ জন জঙ্গি বিপুল বিস্ফোরক এবং অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ওই স্কুলটিতে। জঙ্গিদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। স্কুলের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন সেনাবাহিনীর দখলে।
এই ঘটনার পর পাকিস্তানজুড়ে চলছে শোকের মাতম। শুধু পাকিস্তানিদেরই নয়, বিশ্ববাসীকেও করেছে স্তম্ভিত, হতবাক এবং নির্বাক। ঘৃণ্য এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা এই ঘটনাকে হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পর পেশোয়ার শহর আজ বুধবার যেনো এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হযেছে। প্রাণপ্রিয় সন্তানদের শুধু সমাধিই নয়, সঙ্গে এক বুক স্বপ্ন এবং ভালোবাসাও মাটির নিচে চাপা দিতে হচ্ছে তাদের শোক বিহ্বল বাবা-মাদের।
পেশোয়ারের ওই স্কুলশিশুদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে সেখানে হাজির হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এই ঘটনায় ৩ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি ঘৃণিত এই ঘটনায় কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এই ঘটনাকে সর্বকালের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ‘প্রতিটি শিশুর শরীর হতে ঝরে যাওয়ার রক্তের প্রতিশোধ নেবো আমরা। হায়েনারা আজ যে ঘটনা ঘটিয়েছে এর দাঁতভাঙা জবাব তাদের পেতেই হবে।’
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরপরই প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জঙ্গি আস্তানায় ব্যাপক হামলা শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অসিম বাজওয়া জানিয়েছেন, ‘খাইবার প্রদেশের দুর্গম এলাকায় ১০ বার বিমান হামলা চালানো হয়েছে। জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আরও বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।’
এখন পাকিস্তানের পেশোয়ার এলাকায় বাতাসে শুধু কান্নার আওয়াজ। স্বজনহারাদের আহজারিতে ভারি পুরো এলাকা। কেও কখনও ভাবেনি এমন নির্মমতার কথা। এই নির্মম নিষ্ঠুরতা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। বিশ্ববাসী এখন শুধুই বসে আছে কবে শান্তির সেই সুবাতাস বইবে। কবে সন্ত্রাসীদের আস্ফালন চিরতরে বিলীন হবে।