দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পিতা-মাতা সব সময় চান যে তার সন্তান ভালো ফলাফল করুক। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমি এক পিতার খবর পাওয়া গেছে যিনি তার মেয়ে প্রত্যাশার অতিরিক্ত ফলাফল জিপিএ-৫ পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
গতকাল সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। আর মেয়ে অপ্রত্যাশিত জিপিএ-৫ পাওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক পিতা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে পরীক্ষার তার মেয়ের খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দিয়েছে- এমন দাবি করে তিনি এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
ওই অভিভাবক শিক্ষকের নাম ফাহমিদুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ‘শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি মঞ্চ করে আন্দোলন করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এই আন্দোলনে অন্যদের শরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
পাঠকদের জন্য ফাহমিদুল হকের স্ট্যাটাসটি তুলে দেওয়া হলো:
‘আমার আর রিপার মেয়ে তাহিয়া জিপিএ ৫ পেয়েছে। সব সাবজেক্টে এ প্লাস। কিন্তু আমি খুশিতে আত্মহারা নই। কারণ আমি জানি সে আপাতত জিপিএ ফাইভ পাবার যোগ্য নয়।
তাহিয়া ওয়ান থেকেই মোটামুটি ‘সি’ পেয়ে পাশ করে আসছে। আমি জানি ওর জিপিএ ফাইভ পাওয়ার যোগ্যতা আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তা নেই। পিতা-মাতা হিসেবে আমরা ওকে ‘সি’ পেয়ে বড় হয়ে ওঠার পরিবেশই দিয়েছি। ও স্কুলে যাবে, ক্লাস করবে, সবার সঙ্গে মিশবে, সামাজিক হবে, হাসবে খেলবে, বাইরের বইপত্রও পড়বে, প্রচুর দুষ্টুমি করবে, ডিজনি-পিক্সার-ড্রিমওয়ার্কস নির্মিত ফেইরি টেলগুলো দেখবে, নিজেই ফেইরি হয়ে স্বপ্নরাজ্যেও ঘুরবে…। কিন্তু হাসতে খেলতে কয়েক বছর পেরিয়ে গেলো, ফাইভের পাবলিক এক্সাম চলে এলো। আমরা ওকে চাপাচাপি শুরু করলাম। খেয়াল করা গেলো, ও অংকে বেশ দুর্বল। হাফ ইয়ারলিতে পঞ্চাশের কম নম্বর পেয়েছে। টিউটর দিয়ে করে আবার নিজেই অংক-বিজ্ঞান পড়ানো শুরু করলাম। নির্বাচনী পরীক্ষায় অংকে সে ৭৩ পেলো। এরপর প্রায় এক দেড়-মাস ঘরে বসে প্রচুর পড়লো সে। ও খেটেছে অনেক। তাতে সি থেকে বি অথবা এ হবার কথা। তবে সবগুলোতে এ-প্লাস পাওয়া অ্যাবসার্ড ব্যাপার। আমি ওকে শেষ ২ মাস পড়িয়েছি। আমি জানি; ওর পরীক্ষাও ভালো হয়েছে কিন্তু, ২/৩ মাসে এমন কোনো ম্যাজিক কেও দেখায়নি যে,বা জিনি এসে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যায়নি যে, ও গোল্ডেন এ প্লাস পাবে। বলাবাহুল্য, সে ফাঁস হয়ে যাওয়া কোনো প্রশ্নও হাতে পায়নি। আমরা সেসব খুঁজিওনি।
ওর নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত। এই ইনফ্ল্যাটেড এ-প্লাস বিস্ফোরণ বন্ধ হওয়া দরকার। এটা শিশুদের রেজাল্ট সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা দিচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের কথা আলাদা করে বলার প্রশ্নই আসে না। আর পিএসসির মতো শিশুহত্যাকারী পাবলিক এক্সাম আজকেই উঠিয়ে দেওয়া দরকার। আগেই বলেছি শিক্ষানীতির বহির্ভূত পিএসসি এক্সাম চালু করেছে যারা, তারা ‘সিরিয়াল চাইল্ড কিলার’। আমরা গঠন করেছি ‘শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন’। আমরা বই উৎসবের দিনে, পহেলা জানুয়ারি দাঁড়াবো আজিমপুরের ৩টি স্কুলের সামনে। ১১:০০টায় অগ্রণী স্কুল, ১১:২০ ভিকারুন্নেসা এবং ১১:৩০ আজিমপুর গার্লস স্কুল।
আমাদের দাবি: আমাদের দাবি: “সকল পর্যায়ে প্রশ্নফাঁস করে শিক্ষা ধ্বংসের আয়োজন রুখে দাঁড়াও! এ-প্লাসের দুর্নীতি, মূল্যায়নে কারচুপি বন্ধ করো! অবিলম্বে শিক্ষানীতি-বিরোধী শিশুধ্বংসী পিএসসি পরীক্ষা বাতিল করো!”
আপনারাও যোগ দিন।’
মেয়ের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে কিভাবে শতভাগ নিশ্চিত হলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহমিদুল হক বলেছেন, ‘আমি ওকে চিনি। ওর প্রস্তুতি নিয়েও জানি। ওর মেধা সম্পর্কে আমার সব জানা আছে। সব কিছু মিলিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার কথায় বলেছি।
শিক্ষক পিতার এমন বক্তব্য পুরো জাতিকে বিস্মিত করেছে। তবে সেই সঙ্গে একটি বিষয় সমাজের সামনে উঠে এসেছে তা হলো, শিক্ষার মান, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করা জরুরি। শিক্ষার্থীরা যাতে ভুল পথে না যায়। তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। ওই পিতা ফাহমিদুল হকের মতো সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে নিজের জন্য, সবার জন্য এবং দেশের জন্য। আজ এটিই সবার কাছে প্রত্যাশা।