দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বেতনের জন্য কত শিক্ষক রাজপথে নেমে এসেছেন- প্রাণও দিয়েছেন এমন খবর আমাদের সকলের জানা। অথচ মারা যাওয়ার ৬ বছর পরেও একজন শিক্ষক বেতন পেয়েই যাচ্ছেন! এমন আশ্চর্যজনক সংবাদও আমাদের চোখে পড়ে।
একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে মারা গেছেন পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ সুবিদ খালী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক আবদুস সালাম মোল্লা। কিন্তু কাগজে-কলমে তিনি ৬ বছর ধরে জীবিত। তার নামে বেতন-ভাতা সবই যাচ্ছে। তার একাউন্ট নম্বর, ইনডেক্স নম্বর সবই ঠিক আছে। তবে দুর্নীতির মাধ্যমে এই টাকা নিচ্ছেন কলেজেরই বাংলা বিভাগের শিক্ষক বীণাপাণি অধিকারী। মৃত আবদুস সালামের স্বাক্ষর তিনিই করছেন। ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর একই আছে। এমপিও নম্বরও ঠিক। এ দুর্নীতির সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ, গভর্নিং বডি, ব্যাংকের কর্মকর্তা ও শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তারা জড়িত।
মৃত ব্যক্তির একাউন্টে দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা যাওয়ার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ডিজি অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের ঘটনা কিভাবে ঘটতে পারে তা ভেবে পাচ্ছি না। এর সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষসহ অনেকেই জড়িত বলে জানান তিনি। মৃত ব্যক্তির নামে বেতন-ভাতা যাচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তদন্তে ভয়াবহ এ দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনার প্রমাণ মেলার পর নড়েচড়ে বসেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারা। মাউশির উপ-পরিচালক আবুল হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে। তদন্ত রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুবিদ খালী মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মৃত আবদুস সালাম মোল্লার নাম ব্যবহার করে বীণাপাণি অধিকারী বেতন-ভাতা নিয়েছেন। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হলেও এমপিওভুক্ত নন। এর আগে আরেকবার বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও কোন কাজে আসেনি।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে মৃত শিক্ষকের নামে বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে মৃত শিক্ষকের নামের একাউন্টে বেতন-ভাতা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তারা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রমাণ পান। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, এ দুর্নীতির সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ, গভর্নিং বডির সদস্য, ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত। তাছাড়া এ ধরনের দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। মৃত ব্যক্তির নামে কিভাবে এত বছর বেতন-ভাতা গেল তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ওই সদস্য।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান বলেন, গভর্নিং বডির অনুমতিক্রমেই আবদুস সালামের টাকা বীণাপাণি অধিকারীকে দেয়া হয়েছে। এটা অনিয়মের পর্যায়ে পড়ে কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, বেসরকারি কলেজে এমনই হয়। তিনি বলেন, অভিযোগ ওঠার পর এটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনিই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ বলে জানান। মৃত ব্যক্তির পরিবার বিষয়টি জানতো কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, বেসরকারি আর সরকারি কলেজ এক নয়।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই আমরা বিষয়টি তদন্ত করেছি। তদন্তে মৃত শিক্ষকের নামে বেতন-ভাতা দেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দুর্নীতি দূর করতে। শতভাগ সফল হয়েছি তা বলবো না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সব কর্মকর্তা সৎ তা-ও বলা যাবে না। তবে এটা বলতে পারি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবো না। যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকুক আমরা ব্যবস্থা নেবো।
এমন ঘটনাও আমাদের দেশে ঘটে! যেখানে একজন শিক্ষক পরিশ্রম করে বেতন পাচ্ছেন না- সেখানে মৃত শিক্ষকের বেতন দুর্নীতির মাধ্যমে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে।