দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবলা পশু হলেও তাদের মধ্যেও রয়েছে মমত্ববোধ। তার প্রমাণ পাওয়া গেলো। মায়ের মৃতদেহের পাশে দুদিন দাঁড়িয়ে ছিল এক হাতি শাবক।
ওই হাতি শাবকটি মাকে ছাড়া কখনও থাকেনি। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা মায়ের সঙ্গে থাকতো। মায়ের সঙ্গে খাওয়া, মায়ের পাশেই ঘুম- সব সময় থাকতো মায়ের পাশেই। মায়ের সঙ্গে জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে বেড়াতো মাইলের পর মাইল। শুঁড় দিয়ে কলাটা-মূলোটা গাছ হতে পেড়ে খাওয়াতো তার মা। আজ সেই মায়ের দেহটা এভাবে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলো কেন? এমন প্রশ্নের সম্মুখিন ওই হাতি শাবকটি শুঁড় দিয়ে মাকে ঠেলতে থাকে। ৭ বছরের ছোট্ট শাবকটি যেনো বারংবার অনুনয় করছে কাতর স্বরে- ওঠো মা, খিদে পেয়েছে। দলের সবাই যে যার মতো চলে গেলো। তুমি যাবে না মা? কিন্তু মা তো নিথর- কোনো সাড়া শব্দ নেই। মৃত্যুর ওই শাবকটির মাকে কাবু করেছে। কিন্তু অবোধ ওই পশু শাবকটি কিছুই জানে না বা বোঝে না।
এই ঘটনাটি ভারতের ঝাড়খণ্ড সীমানায় বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা রেঞ্জের জবলাদহের জঙ্গলে ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায় এই করুণ দৃশ্য। গভীর জঙ্গলে পড়ে রয়েছে মা-হাতির মৃতদেহ। আর শোকে কাতর ছোট্ট শাবকটি মায়ের দেহ আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ক্রমাগতভাবে শুঁড় বুলিয়ে চলেছে মায়ের শরীরে। গ্রামবাসীরা জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে খবর দেন বন কর্মকর্তাদের। তারপর পশুচিকিত্সকসহ বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
জানা যায়, ৬টি হাতির একটি দল ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে মা হাতিটির মৃত্যুর পর বাকি ৪ হাতি চলে গেলেও যায়নি শুধু শাবকটি। দিনরাত মাকে আগলে রেখেছে সে। এদিকে শাবকটির জন্য বনকর্মীরা মা হাতিটির মৃতদেহের কাছেও যেতে পারছিলো না। দিন শেষে রাত এলেও শাবকটি তার মাকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। পরে শুক্রবার সকালে বনকর্মীরা ফের জবলাদহ জঙ্গলে হাজির হয়ে দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় তারা হাতির বাচ্চাটিকে মৃত হাতিটির নিকট হতে সরাতে সক্ষম হন।
স্থানীয় বাসিন্দারা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মায়ের দেহ ছেড়ে দু’দিন বাচ্চাটা এক পা-ও সরেনি। উল্টে মানুষজন দেখে আরও চিৎকার করছিল। মাঝে-মধ্যেই মায়ের শরীরের উপর শুঁড় বুলাচ্ছিল। এলাকার মানুষজন এই ঘটনার কথা শোনার পর ভিড় জমান এবং হাতি শাবকের এমন দৃশ্য দেখে ব্যথিত হন। কিন্তু তারপরও কারও কিছুই করার নাই।