দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক অবাক করা কাণ্ড ঘটেছে। চিকিৎসকরা তো হতবাক। কারণ এক তরুণীর মাথায় তারা পেলেন ভ্রূণ!
এক তরুণী এলেন চিকিৎসকদের কাছে কারণ চোখে কোনও সমস্যা নেই তবুও সবই ঝাপসা দেখছিলেন তিনি। আবার কানে কিছুই হয়নি, অথচ ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছিলেন না। আবার মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা। ২৬ বছরের তরুণীর আসলে কী হয়েছে, তা ভেবে কোনো কূল-কিনারা করতে পারছিলেন না তার বাবা-মা। মাথায় হাত চিকিৎসকদেরও। স্ক্যান করে দেখা গেলো, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় পড়ুয়া যামিনী কারানামের মাথার ভিতরে মটর দানার মতো কিছু একটা রয়েছে। প্রথমেই চিকিৎসকরা ধরেই নেন টিউমার। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ডাক্তাররা দেখেন, কোথায় গেলো টিউমার? মটর দানার মতো অত ছোট জিনিসও নয়। বরং মাথার মধ্যে রয়েছে হাড়, দাঁত, চুলসহ একটা অপরিণত ভ্রূণ!
ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, যামিনীর ঝাপসা দেখা, খেতে না পারা, কানে কম শোনা, এ সবের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের শেষে ডিসেম্বরের দিকে। হায়দরাবাদের তরুণীটিকে যন্ত্রণা হতে মুক্তি দিতে কী করা যায়, ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না আমেরিকার চিকিৎসকরাও। মাথার ঠিক মাঝখানে পিনিয়াল গ্ল্যান্ডে টিউমার হয়েছে। অস্ত্রোপচার করা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার। এদিকে যামিনীর যন্ত্রণা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
অস্ত্রোপচার করা ঠিক হবে কি না- এমন এক পরিস্থিতিতে হঠাৎ ডাক্তার এইচ শাহিনিয়ানের সন্ধান পায় যামিনীর পরিবার। ‘কি-হোল’ অস্ত্রোপচারের জন্য সুনাম রয়েছে শাহিনিয়ানের। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, মাথার খুব সামান্য অংশ ফুটো (কি-হোল) করে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে যাওয়া। আর তারপর ছুরি-কাঁচি চালিয়ে টিউমারটিকে অপসারণ করা।
অপারেশনের জন্য যামিনীর মাথার পিছন দিকে একটা ছোট্ট গর্ত করেন শাহিনিয়ান। নিপুণভাবে একটা এন্ডোস্কোপ ঢুকিয়ে দেন খুলির মধ্যে। তারপরই চমক। শাহিনিয়ান দেখেন, টিউমার নয়, সেখানে রয়েছে একটি ‘টেরাটোমা’ (এমন টিউমার, যার মধ্যে রয়েছে কলাস্তর বা টিস্যু। এটি সাধারণত কোনও অঙ্গে থাকে)। চুল-দাঁত-হাডড়ের মাংসপিন্ড!
চিকিৎসকরা বলেছেন, টেরাটোমাটি আসলে ওই তরুণীরই যমজ বোনের ভ্রূণ হওয়ার সম্ভাবনা। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন যা কোনওভাবে তার শরীরে চলে যায়। তারপর গত ২৬ বছর ধরে এই ভ্রুণটি গোপনে রয়ে যায় যামিনীর দেহে।
কর্মজীবনে হাজার আষ্টেক অস্ত্রোপচার করেছেন শাহিনিয়ান। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার টেরাটোমা-র মুখোমুখি হলেন তিনি। তবে এবারও সফল হয়েছেন তিনি। মাংসপিন্ডটি বাদ দেওয়া হয়েছে যামিনীর মাথা হতে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, এবার ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন মেয়েটি।