দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিজ্ঞানীরা সৃষ্টি রহস্যকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, ভবিষ্যতে মানুষও হবে হাইব্রিড! এমন দুর্ভেদ্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন গুগলের প্রকৌশল পরিচালক রে কুর্জওয়েল।
বিজ্ঞান ও গবেষণা এমনভাবে এগিয়ে চলেছে যে, সৃষ্টি রহস্যকেও তারা পাত্তা দিতে চাচ্ছেন না। আমরা জানি সৃষ্টিকর্তা মানুষের হাতে সব কিছু তুলে দেননি। বিজ্ঞান এতোকিছু আবিষ্কার করলেও মৃত্যু ঠেকাতে তারা পারেন নি। এমনিভাবে বলা হয়, হায়াত, মৌত (মৃত্যু), রিজিক, দৌলত এই চারটি জিনিস সৃষ্টিকর্তার হাতে। আসলেও তাই।
কিন্তু তাই বলে গবেষণা থেমে নেই। বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। তবে এবার একটু ব্যতিক্রমি গবেষণার কথা বলা হলো। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ হাইব্রিড হয়ে যাবে- এমন আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা। ভবিষ্যতে মানুষের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে- তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন গুগলের প্রকৌশল পরিচালক রে কুর্জওয়েল। তাঁর ধারণা, ১৫ বছরের মধ্যেই মানুষ তার মস্তিষ্ক সরাসরি ক্লাউডের সঙ্গে সংযুক্তও করতে পারবে। ক্লাউড হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে তথ্য ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা।
নিউইয়র্কের এক্সপোনেনশিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশনের এক সম্মেলনে সম্প্রতি রে কুর্জওয়েল মানুষের সঙ্গে ক্লাউড প্রযুক্তির সম্পর্ক নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে ক্লাউড প্রযুক্তির সংযোগ ঘটবে ও চিন্তাভাবনার বিষয়টি হবে কিছুটা জীববিদ্যাগত, আবার কিছুটা যান্ত্রিক।
কুর্জওয়েলের এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে সিএনএন তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে ‘২০৩০ সালে আমাদের চিন্তাভাবনা বায়োলজিক্যাল এবং নন বায়োলজিক্যাল এর হাইব্রিড হয়ে যাবে।’
কুর্জওয়েলের মতে, মানুষ তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে এক সময় ক্লাউড প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত হতে শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি কারিগরি উন্নতির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। মানুষ প্রযুক্তিকে যেদিকে নিয়ে যাবে প্রযুক্তিও সেই দিকেই অগ্রসর হবে।
শুধু কুর্জওয়েল নয়, সম্প্রতি হাইব্রিড মানুষ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন ইসরায়েলের এক অধ্যাপক। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ আর মানুষ থাকবে না, হয়ে যাবে যন্ত্রমানব। মানুষ হিসেবে নিজের ওপর অসন্তুষ্টি, ধর্মবিশ্বাস লোপ পাওয়ায় মানবজাতির মধ্যে আগামী ২শ’ বছরের মধ্যেই বিশাল পরিবর্তন আসতে পারে।’ ইসরায়েলের জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যুবাল নোয়া হারারি এমন মন্তব্য করেছেন।
অধ্যাপক যুবাল নোয়া হারারি বলেন, ‘মানুষ নিজেকে আপগ্রেড করে আগামী ২শ’ বছরের মধ্যেই সাইবর্গ কিংবা যন্ত্রমানবে রূপান্তর করতে সক্ষম হবে। দীর্ঘায়ু লাভের আশায় মানুষ নিজের শরীরে যন্ত্র বসিয়ে নিজেকে সাইবর্গ করে তুলবে।’
অধ্যাপক যুবাল নোয়া হারারি মনে করেন, ‘বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা নতুন ধরনের দীর্ঘায়ুসম্পন্ন মানবজাতিতে পরিণত হবে এবং জীবন-মৃত্যুর সম্পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাবে। মানুষ হিসেবে অসন্তুষ্টি তাদের নিজেদের আপগ্রেড করতে উদ্বুদ্ধ করবে। সাইবর্গ প্রযুক্তির সহজলভ্য হওয়ায় তারা এই প্রযুক্তির যথেচ্ছা প্রয়োগ শুরু করবে।’
অধ্যাপক হারারি সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই সাইবর্গ প্রযুক্তির বিনিয়োগের সুফল কেবলমাত্র ধনীরাই ভোগ করবে। কারণ এই ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের পেছনে খরচ করার সামর্থ্য কেবল তাদেরই রয়েছে। আর তাই ধনী-গরিবের বৈষম্য ক্রমেই বাড়তে থাকবে। এক্ষেত্রে কেবল ধনীরাই দীর্ঘায়ু হতে থাকবে।’ অধ্যাপক হারারির কথায় বোঝা যাচ্ছে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে, দুনিয়া এক অন্যদিকে ধাবিত হবে। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতা মানুষকে আরও অমানুষ করে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।