দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাভারে রানা প্লাজা ধসের স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনায় লাশের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। নিখোঁজ তালিকায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ১০০ জনের নাম রয়েছে। স্বজনদের খোঁজে অন্তহীন ছোটাছুটি থামছে না। হতাশ হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। গতকাল রাত পোনে ১২টা থেকে অভিযানে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু হয়েছে। জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ।
এদিকে নিহতদের খোঁজে এখনও আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি সাভার এলাকার পরিবেশ ভার করে রেখেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখান থেকে অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় মাঠ- কোথাও মিলছে না প্রিয়জনের মুখ।
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ৩৯৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৮ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ৩২১ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের তথ্য জানানো হয়েছে। মিটফোর্ডে ২০ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিম ঘরে ৩৬টি লাশ রাখা আছে।
গতকাল সারা দিনে আরও পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে এ সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭ জনে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৪৭৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ স্বজনদের আহাজারি ক্ষোভ বাড়ছে। লাশের দাবিতে সাভারজুড়েই ছিল স্বজনহারা হাজারো মানুষের ক্ষোভ-উত্তেজনা। তাদের একমাত্র দাবি মৃত হলেও তারা লাশটি অন্তত ফিরে পেতে চান। অধরচন্দ্র স্কুল মাঠে সারা দিন থেমে থেমে মিছিল ও বিক্ষোভ করেছেন তারা। স্লোগান ছিল ‘স্বজনের সন্ধান চাই, নইলে মুরাদ-রানার ফাঁসি চাই। একটু আগে খবর এলো, রানা নাকি গ্রেফতার হলো।’ এভাবেই সাভারের পথে পথে মিছিল করেছেন স্বজনহারা মানুষ। মজনু তার নিখোঁজ ভাইয়ের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘শ্রমিকরা গরিব বলে রানা আর মুরাদ জংরা পিঁপড়ার মতো হত্যা করেছেন। তাদের ফাঁসি দিতে হবে।’ তালেব নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘বার বার শ্রমিকদের আগুনে পুড়িয়ে, ভবন ধসের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড কি বন্ধ হবে না আমরা কি এর বিচার পাবো না রানা ও মুরাদ জংকে ফাঁসি দিয়ে এই রক্তের বদলা নিতে হবে।’
এদিকে রাজধানীতে আজও বেশ কিছু স্থানে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুই দিন বন্ধ থাকার পর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আজ সোমবার খুলেছে। ফ্যাক্টরি খোলার পর উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে থাকে। যদিও মূল হোতা রানা গ্রেফতার হওয়ায় জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্থি ফিরে এসেছে। তারপরও এর সঙ্গে জড়িত অন্যদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।