দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আনন্দ যেনো আর ধরে না। যাদের এতোবছর ধরে পতাকা ছিল না, ছিলনা নাগরিত্ব। নিজ দেশে যেনো পরবাসী জীবন-যাপন করেছে। তারা আটষট্টি বছর পর আজ উড়েয়েছে মুক্তির পতাকা।
গেলো মধ্য রাতের আঁধার ঠেলে ছোট ছোট আলোতে আলোময় হয়ে উঠেছিল চারপাশ। সে আলোতে আলোকিত হয়েছে ছিটমহলবাসীরা। দীর্ঘ আটষট্টি বছরের প্রতীক্ষার সেই পতাকা উড়িয়েছে গভীর রাতের বাতাসে। ওই পতাকাটিই যেনো জানান দিলো- ‘এ আকাশ আমার, এই বাংলাদেশ এখন আমার’।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশের সীমানায় যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতে ওড়ানো হলো বাংলাদেশের পতাকা। ৬৮টি মোমের প্রদীপে প্রোজ্জ্বল হয়েছে প্রতিটি বাড়ি। অপরদিকে ভারতের সঙ্গে যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতেও ছিল প্রায় একই রকম চিত্র।
দীর্ঘ অপেক্ষার মুক্তির স্বাদ অনন্য হয়ে সকলের কাছে ধরা দিয়েছে। মুক্তিকামী পঞ্চাশ হাজার অধিবাসীর কাছে ঘুচেছে ‘নিজ দেশে পরাধীনতার’ সেই দীর্ঘ গ্লানি। নিজ নিজ দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ওইসব ছিটমহলের সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ছিল না। অপর দেশের সীমানার ভেতরে হওয়ার কারণে হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ কিংবা বিচার, প্রশাসনও ছিল না ছিটমহলে। এক পরাধীন যাযাবরের মতো জীবন-যাপন করছিল ছিটমহলবাসী। সেই পরাধীনতার অবসান ঘটলো আজ।
ভারত এবং বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ১ অগাস্ট হতে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর আয়তনের ভারতের ১১১টি ছিটমহল এখন বাংলাদেশের ভূখণ্ড।
অপরদিকে ভারতের মধ্যে থাকা ৭ হাজার ১১০ দশমিক ০২ একর আয়তনের বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল আজ মিলে গেছে ভারতের মানচিত্রের সঙ্গে। আর এভাবেই দীর্ঘ আটষট্টি বছরের চিত্র পাল্টে গেছে। আজ আনন্দে আত্মহারা ছিটমহলবাসী। কারণ এতোদিন তাদের কাছে যেটি ছিল সোনার হরিণের মতো, আজ সেটি তাদের হাতে ধরা দিয়েছে। এখন তাদের পতাকা আছে, আছে নাগরিকত্ব। নিজ দেশে স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ এখন তাদের হাতের মুঠোয়।
দীর্ঘ আটষট্টি বছরের অমীমাংসিত এই সমস্যার অবসানের কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের মানচিত্র পেলো এক পূর্ণতা। এখন হতে ‘ছিটমহল’ শব্দটি থাকবে কেবল ইতিহাসের পাতায়।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে দেশ ভাগের সময় সিরিল রেডক্লিফ কমিশনের তাড়াহুড়োর কারণে চিহ্নিত করা সীমান্তে ছিটমহল জটিলতা শুরু হয়। এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিও হয়। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন হয়নি দীর্ঘদিন। এরপর এটি কার্যকরে প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয় ২০১১ সালে। এবছরের ৭ মে ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ওই চুক্তি বাস্তবায়নের পথ সুগম হলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর করা হয়।