দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একজন রাষ্ট্র প্রধানের জনপ্রিয়তা একদিনে হয় না। আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের জনপ্রিয়তার নেপথ্যের বিষয়গুলো নিয়েই এই প্রতিবেদন।
ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাশিয়ায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। তাঁর এই ক্ষমতাকালিন সময় আলোচনা-সমালোচনার উভয় রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সুনাম রয়েছে। আবার সেই সঙ্গে রয়েছে দুর্নামও। আর তাই কারও চোখে তিনি নায়ক, আবার কারও চোখে তিনি খলনায়কও। কেও বলেন তিনি স্বৈরশাসক, তিনি নাকি ছলেবলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। আবার কেও বলেন, পুতিন ছাড়া রুশদের রক্ষা করার মতো আর কোনো নেতা নেই।
দোষ-গুণ যতো কিছুই থাকুন না কেনো, এই প্রেসিডেন্টকে দেশটির বেশির ভাগ মানুষ এখনও পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন। কিন্তু কি কারণে? যুক্তরাজ্যের নিউ স্টেটসম্যান সাময়িকী এই প্রশ্নের কিছু উত্তর খুঁজে বের করেছেন।
প্রথমত বলতে হয় গত প্রায় এক বছরে ইউক্রেন-ইস্যুতে পুতিনের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। সে কারণে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে রাশিয়া। তবুও অনমনীয়ভাবে ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সর্বত্রভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর তাই পশ্চিমারা পুতিনের সমালোচনায় মুখর। তারা রুশ প্রেসিডেন্টকে খলনায়ক হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে বারবার। এতেও পুতিনের কিছু যায়-আসে না বলেই মনে হয়েছে। জনমত জরিপের ফল অন্তত এমন আভাস দিচ্ছে। এতোকিছুর পরও দেশের মানুষের নিতট এখনও বেশ জনপ্রিয় পুতিন।
রাশিয়ার স্বাধীন জরিপ ও গবেষণা সংস্থা দ্য লেভাদা সেন্টারের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে, রাশিয়ার ৮৭ শতাংশ মানুষ এখনও পুতিনকে সমর্থন করে। গত জুন মাসে পুতিনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল ৮৯ শতাংশ। ২০১২ সালে জনপ্রিয়তা ছিল ৬৪ শতাংশ।
নিউ স্টেটসম্যান সাময়িকী রুশদের মধ্যে তাদের বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিপুল গ্রহণযোগ্যতার কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন দৃঢ়চেতা এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা মনে করে দেশটির অধিকাংশ মানুষ। রাশিয়ায় তিনি যতটা সম্মান এবং শ্রদ্ধা পেয়েছেন, অন্য কেও তা পাননি। তিনি যেমন কথায় মানুষকে মুগ্ধ করতে পারেন- ঠিক তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাঁর কাছে নস্যি।
ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে তুলেছেন। দেশটির অনেকেই এখন রুচিশীল গাড়ি চালায়। আবার বিদেশ ভ্রমণ করে। ভালো পোশাকও পরে। পুতিন ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছরে দেশটির মানুষের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। আবার বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা। রাশিয়ার পথেঘাটে গেলে পরিবর্তনটা যে কারও চোখে পড়বে। পরিসংখ্যানও তেমন সাক্ষ্যই দেয়।
রুশরা মনে করে, নানা সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির সামাজিক ব্যাপক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি যেমন অবসরভাতা বাড়িয়েছেন। তেমনি বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে। সেইসঙ্গে ঘটিয়েছেন অবকাঠামোর উন্নয়ন। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন। রাশিয়ায় হত্যাসহ অপরাধ অনেক কমে গেছে। এসব পদক্ষেপের কারণে গত ২০ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে প্রথম রাশিয়ায় মৃত্যুর চেয়ে জন্মহার অনেক বেড়েছে। তাই সবদিক বিবেচনায় এনে পুতিনের শাসন ব্যবস্থা জনগণ মেনে নিচ্ছে অবলীলায়। এটি রাশিয়ার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সেখানকার সাধারণ মানুষও। তাই কোনো সমালোচনায় ভ্লাদিমির পুতিনের জনপ্রিয়তা কমেনি- বরং বেড়েছে।