দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রাত ১২.৫৫ মিনিটে একইসঙ্গে দুইজনের রায় কার্যকর করা হয়।
জল্লাদ শাহজাহান কার্যকর করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জল্লাদ রাজু কার্যকর করেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আজ সন্ধ্যা হতেই কারাগারের আশেপাশের সকল সড়ক বন্ধ করে চেকপোস্ট বসানো হয়। ওই এলাকায় বসবাসকারী ও সাংবাদিক ছাড়া আর কাওকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং দাফনের জন্য পুলিশ প্রহরায় চট্টগ্রামের রাউজানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। অপরদিকে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মরদেহ তাদের পরিবারকে হস্তান্তরের পর পুলিশের বিশেষ প্রহরায় ফরিদপুরের খাবাসপুরে নিজ গ্রামে নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। দাফন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ নিরাপত্তা বিধান করবে বলে জানা গেছে।
দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রসঙ্গ
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা ও সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা ও ৬ষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র এবং ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ওই দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়।
একই রায় এসেছিল ৭ম অভিযোগে, ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায়।
চূড়ান্ত রায়ে চলতি বছরের ১৬ জুন আপিল বিভাগ মুজাহিদের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে প্রথম অভিযোগে আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। ৭ম অভিযোগে তার সাজা কমিয়ে করা হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
৬ষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
রিভিউ শুনানিতে মুজাহিদের আইনজীবী শুধু মৃত্যুদণ্ডের সাজাটি নিয়েই কথা বলেন। এটি আইনসম্মতভাবে হয়নি দাবি করে তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর রায় এসেছিল ১ অক্টোবর ২০১৩ সাল। সেখানে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
এর মধ্যে ৪টি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড এবং ৫টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।
এ বছর ২৯ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে ৮টিতে দণ্ডাদেশ বহাল রাখে, ১টিতে সাকা চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হয়।
৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর এবং ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা ও হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা এবং তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় তার সর্বোচ্চ সাজা বহাল রাখা হয়।
অপরদিকে ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকে, তবে ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের সাজার ক্ষেত্রে আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।
১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ৫ বছর কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয় চূড়ান্ত রায়েও।
সাকা চৌধুরীর দাবি ছিল, একাত্তরে ২৯ মার্চ তিনি ঢাকা ছেড়ে করাচি চলে যান এবং ফেরেন ১৯৭৪ সালে। আইনের ভাষায় একে বলা হয়, ‘প্লি অব অ্যালিবাই’। অর্থাৎ অপরাধ সংগঠনের সময় ও স্থানে আসামির উপস্থিত না থাকা।
রিভিউ আবেদনের শুনানিতে তার আইনজীবী তেমনই দাবি করেন। এ জন্য পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০১২ সালে আনা একটি সার্টিফিকেট তারা আদালতে তুলে ধরেন। তবে অসামঞ্জস্য থাকার কারণে আদালত তা গ্রহণ করেনি।