দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ট্রাক চালানো বেশ শক্ত হাতের কাজ। আর তাই পুরুষরাই এই কাজটি করেন। তবে এবার এক শিক্ষিত নারী ধরেছেন ট্রাকের স্টিয়ারিং।
আমরা এমনই একজন নারী ট্রাক ড্রাইভারের খোঁজ পেয়েছি যিনি ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত ট্রাক ড্রাইভার। এই ২ সন্তানের জননী ট্রাক ড্রাইভারের নাম যোগিতা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা শুনলে রীতিমতো চমতে উঠবেন। বাণিজ্য এবং আইন নিয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারী এই মহিলা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনাটি সত্যি! সম্ভবত তিনিই ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত ট্রাকচালক।
ভাগ্য কাকে কখন কোনস্থানে পৌঁছে দেয়, তা হয়তো কেও বলতে পারে না। যেমনটা ঘটেছে যোগিতার ক্ষেত্রে। উত্তরপ্রদেশের মেয়ে যোগিতা বড় হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। ১৯৯১ সালে ভোপালের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগিতার বিয়ে হয়।
বিয়ের পূর্বে পাত্রপক্ষের তরফে বলা হয়েছিল যে, ওই ব্যক্তি ভোপাল উচ্চ আদালতে ওকালতি করেন। তবে পরে তিনি জানতে পারেন যে, পুরোটাই ছিল ভাঁওতাবাজি। এ কথা জানার পর যোগিতার মাথার ওপর যেনো বাজ ভাঙে। ততোদিনের মধ্যেই দু’সন্তানের মা হয়ে গিয়েছেন যোগিতা।
তার সংসারে নিত্যদিন ঝামেলা লেগেই থাকতো। প্রায় ১৬ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান যোগিতার স্বামী। একা হাতে কী করে দুই সন্তানকে সামলাবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না যোগিতা। এমন পরিস্থিতিতেই ল গ্র্যাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও যোগিতা ট্রাকচালক হয়ে যান।
তবে ওকালতি কেনো করলেন না? সে প্রশ্নে যোগিতার ব্যাখ্যা হলো, ওকালতি করতে হলে জুনিয়র হিসেবে কাজ শুরু করতে হতো। তাতে দুই সন্তানের ভরণপোষণ ঠিকমতো করা যেতো না। তাই বাধ্য হয়েই এইরকম পেশায় প্রবেশ তার। যোগিতা নিজের মুখেই জানালেন, সম্ভবত আমি দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত ট্রাকচালক।
নিজের পেশা নিয়ে এখন আর অসন্তুষ্ট নন যোগিতা। তিনি জানালেন, প্রথমদিকে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, কটাক্ষ, প্রলোভন, তির্যক মন্তব্য, নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা সহ্য করতে হয়েছে যোগিতাকে। নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এই মহিলা। তিনি জানালেন, ২০০০ সাল হতে টানা ট্রাক চালাচ্ছেন। ২০১৩ সালের মধ্যেই তিনি প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার চালিয়ে ফেলেছেন।
এই কীর্তি নিয়ে তার কোনও মাথাব্যথা নেই। সামাজিক নিষেধাজ্ঞাকে ভুল প্রমাণ করতে তিনি এই পেশায় আসেননি- এমনটিই জানিয়েছেন তিনি। যোগিতার মতে, এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, আমি অন্য গ্রহের মানুষ।
উল্লেখ্য, যোগিতার দুই সন্তান— যোশিকা ও যশ্বিন বর্তমানে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছে।