দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খেলাকে অনেকেই পছন্দ করেন। তাই খেলার জন্য নিত্যকাজ ফেলে অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন এমনই এক ক্রিকেট প্রেমীর গল্প রয়েছে আপনাদের জন্য। এই মাওলানার নাম মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।
তার বয়স আনুমানিক ২৮/২৯ বছর। এই যুবককে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাইকেলের পেছনে স্পোর্টস ব্যাগ ঝুলিয়ে রাজধানীর শহীদ লেক সংলগ্ন মাঠের দিকে যেতে দেখা যায়। পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে টুপি মাথায় দাঁড়িওয়ালা যুবকের বেশভূষার সঙ্গে স্পোটর্স ব্যাগটি দেখে অনেকেই আড়চোখে তাকিয়ে থাকেন। অনেকেই আবার ঠাট্টা করতেও ছাড়েন না। ঠাট্টা করে জিজ্ঞেস করেন ‘কি হুজুর, ব্যাগের ভেতরে আবার বোমা-টোমা নেইতো!’
এমন কথা শুনে তিনি বিরক্ত হন না বরং মুচকি হেসে উত্তর দেন, ‘মাঠে আসেন, দেখেন, বোমা আছে, তবে সেই বোমা সবাই পছন্দ করে।
আবার প্রাতঃভ্রমণে আসা অনেকেই কৌতুহলী হয়ে মাঠে এগিয়ে গিয়ে দেখেন শুধু ওই যুবকই নন, তার মতো বেশভূষার অনেকেই সেখানে হাজির হয়েছেন। এক সময় সাইকেলের পেছনের ব্যাগ খুলে ওই যুবক ক্রিকেটের ব্যাট ও বলসহ অন্যান্য সামগ্রী বের করেন।
এরপর দু’দলে বিভক্ত হয়ে শুরু হয় খেলা। ক্ষুদে ছেলে-মেয়েদের মতো তারাও চার ও ছয় মারলে এবং বোল্ড ও ক্যাচ আউট হলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবার সেলিব্রেশন শুরু করে। নির্দিষ্ট ওভারের খেলা শেষ হলে ব্যাগে ক্রিকেটসামগ্রী ভরে নিয়ে সাইকেল চেপে আবার উদ্যান ত্যাগ করেন। আর দশজন ক্রিকেটপ্রেমির চেয়ে তাদের পরিচয় একটু ভিন্ন। তারা সবাই বিভিন্ন মাদরাসা হতে অনার্স বা মাস্টার্স পাস করা যুবক!
এদেরই একজন হলেন মাওলানা মোহাম্মদ মনির হোসেন। তার বয়স ২৮ বছর। কুমিল্লা জেলার চান্দিনার নবাবপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর জামিয়া আরাবিয়া এমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসা হতে মেশকাতে সম্মান (অনার্স) এবং দায়রা (মাস্টার্স) পাস করেছেন। তিনি বর্তমানে সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল ৭ এর অফিসারদের একটি অ্যাপার্টমেন্টের মসজিদে ইমামতি করেন। সেইসঙ্গে ওই এলাকায় ক্ষুদে শিশুদের আরবিও পড়ান। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামে থাকেন। তিনি কাকরাইল এলাকার একটি মেসে বসবাস করেন।
সংবাদ মাধ্যমকে আলাপকালে মনির হোসেন জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতে পছন্দ করতেন তিনি। কিন্তু আরবি লাইনে পড়ার সুবাদে পড়াশুনার চাপের কারণে খেলাধুলা করা সেভাবে হয়ে ওঠেনি। পড়াশুনা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে প্রায় প্রতিদিন ক্রিকেট খেলছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তার মতো আরও কিছু মাওলানা এবং হাফেজরাও খেলতে আসেন। ভোরবেলা ফজরের নামাজের ইমামতি করে বাসায় ফেরেন। তারপর তিনি ছুটে আসেন খেলার জন্য মাঠে।
তিনি বলেছেন, অনেকেই মনে করেন মাওলানা হলে বোধহয় খেলাধুলা করা যায় না কিংবা যাবে না । এটা তাদের একটা ভুল ধারণা। নিয়মিত সুস্থ থাকার জন্য সকলেরই খেলাধুলা করা উচিত- এমনটিই মনে করেন মাওলানা মনির হোসেন।