দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রেশমাকে জীবিত উদ্ধারের পর তাকে নেওয়া হয় সাভার সিএমএইচ-এ। সেখানে আইসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। রেশমাকে দু’এক দিনের মধ্যেই হয়তো রিলিজ দেওয়া হবে। কিন্তু রিলিজ পেয়ে সে কোথায় যাবে? এ প্রশ্ন এখন সবার মনে।
সামান্য ভাত কাপড়ও জোটেনি রেশমার। স্বামী তাকে পরিত্যাক্ত করেছে। পেটের তাগিদে সে আত্মীয়ের মাধ্যমে সাভারের রানা প্লাজার গার্মেন্টসে চাকরি করতো। কোন রকমে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরেই দিন কেটেছে তার। এখন চাররি নেই চলাচলের কোন পথও নেই। যদিও প্রধানমন্ত্রী নিজেই রেশমার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সেটি কবে কিভাবে হবে তার কোন ঠিক হয়নি।
তবে একটি বিষয়ে রেশমা বেশ উৎফুল্ল। কারণ এত যত্ন এত আদর আর এত ভালোবাসা পেয়ে রেশমা এখন হতবাক। জন্মের পর প্রথম পেয়েছিল মায়ের ভালোবাসা, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের ভেতর মুক্তির আশায় দিন গুনতে গুনতে ১৬টি দিন পার করে তিনি যেন নতুন জন্মই নিলেন ১০ মে। জীবন তাকে এনে দিয়েছে বিশ্ববাসীর ভালোবাসা। সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার পাশের বেডে অসুস্থ মা ব্লাড প্রেশারের রোগী জোবেদা বেগমেরও চিকিৎসা চলছে। ১৬ দিন ধরে পাগলের মতো মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে জোবেদা হয়ে পড়েন খুবই অসুস্থ। রেশমা নতুন জীবন পাওয়ার পর তার প্রতি মানুষের প্রবল ভালোবাসা দেখে হতবাক মা-মেয়ে। রেশমার বেঁচে থাকা যাদের আনন্দ আর স্বস্তি দিয়েছে তাদের মনে এখন নতুন প্রশ্ন- সুস্থ হয়ে রেশমা কি আবার গার্মেন্টস কারখানায় ফিরে যাবে। সারাবিশ্বে গণমাধ্যমে স্থান করে নেয়া রেশমার গন্তব্য আসলে কোথায়? এ প্রশ্ন এখন সবার মনেই দানা বেধে উঠেছে।
সাভার সিএমএইচের সূত্র বলেছে, দুই-তিন দিনের মধ্যেই রেশমা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তখন তাকে রিলিজ করা হবে। তবে তার পরবর্তী সব চিকিৎসার ভার সাভার সিএমএইচ বহন করবে বলে জানা যায়। রোববার রেশমাকে গোসল করানো হয়েছে। তাকে তিন সেট কাপড় দেয়া হয়েছে । তার মাকেও একটি শাড়ি দেয়া হয়েছে। তার জন্য কেনা হয়েছে শ্যাম্পু, সাবানসহ অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রী। তাকে শুধু বিশ্রামে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ডাক্তার ও পাশের বেডে মায়ের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছেন রেশমা। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জানান, আর কয়েক দিন পরই তাকে রিলিজ করে দেয়া হবে।
লেঃ কর্নেল ডা. শরীফ বলেন, সাবেক স্বামী আবদুর রাজ্জাক এখনও পর্যন্ত রেশমার সঙ্গে দেখা করতে সিএমএইচে আসেনি। তিনি বলেন, রেশমা ভর্তি হওয়ার পর পরই তাকে জানিয়েছিল, রাজ্জাকের সঙ্গে ছয় মাস আগে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
রেশমার বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মেডিকেল টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার যথেষ্ট বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ‘মাটি’র নিচের ১৬ দিনের ভয়াবহতা ভুলে যেতে তাকে সাহায্য করবে। এ কারণে তার সঙ্গে সাক্ষাতের ওপর বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে।
রেশমা সাংবাদিকদের জানান, তিনি ছিলেন ৩ তলায়। ভবন ধসের পর রেশমা দোতলা ও তিনতলার মাঝামাঝি একটি ছোট জায়গায় আশ্রয় নেন। রেশমার পাশেই আরও তিন-চারজন ছিল। তারা সবাই মারা গেছেন। অলৌকিকভাবে বেঁচেছিলেন রেশমা। কিন্তু এখন সুস্থ্য হওয়ার পর তার যাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটিই সবার প্রশ্ন। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর।