দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে কোনো ধর্মেই চুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো ধর্মই চুরিকে সমর্থন করে না। তবে এবার চুরি করতে উৎসাহ দেওয়া হয়- এমন এক আশ্চর্য মন্দিরের খোঁজ মিলেছে!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ভারতেই রয়েছে এমন মন্দির, যেখানে চুরি করাকে হেয়জ্ঞান করা তো হয়ই না, বরংচ মন্দিরে আগত ভক্তদের উৎসাহ দেওয়া হয় চুরি করার জন্য!
আমরা সবাই জানি, চুরি করা একটা ঘোরতর পাপ। প্রাচীন কাল হতে মুঘল আমলেও চুরিকেই সবথেকে বেশি পরিমাণে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হতো। তখনও চোরের হাত-পা কেটে নেওয়া ছিল একজন চোরের নৈমিত্তিক শাস্তি। শুধু তাই নয়, ভারতেও আবহমানে চৌর্যবৃত্তিকে একটা কলাবিদ্যা বলে মনে করার রেওয়াজ ছিল। তস্করদের অনেকেই হয়ে উঠতেন কিংবদন্তি বা রূপকথার কাল্ট নায়ক। অনেক কাহিনীতেই রাজকন্যে মালা দিয়েছেন ঝানু চোরদের গলায়। চোরও সাতসমুদ্র তোরো নদী পেরিয়ে রাজকন্যেকে এনে দিয়েছে সাত রাজার ধন মানিককে।
দুটি বিপরীত মতকে দূরে রেখে যদি ধর্মের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে চুরি মোটেও কোনো অনুমোদিত বিষয় নয়। কিন্তু এই ভারতেই এমন মন্দিরও রয়েছে, যেখানে চুরি করাকে হেয়জ্ঞান করা হয় না, বরং মন্দিরে আগত ভক্তদের উৎসাহ দেওয়া হয় চুরি করার জন্য!
ভারতের উত্তরাখণ্ডের রুরকি জেলার চুড়য়ালা গ্রামের চুড়ামণি দেবীর মন্দিরে নাকি ভক্তদের চুরি করাটাই দস্তুর। আর সেটাই ওই মন্দিরের উপাসনা-পদ্ধতি!
স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস, সন্তানহীন দম্পতিরা নাকি এই মন্দিরে যথাবিহিত আচার পালন করলে সন্তান লাভ করতে পারেন। লোকবিশ্বাস রয়েছে যে, এই মন্দিরটি ৫১ সতীপীঠের একটি। এখানে সতীদেবীর চূড়া পড়েছিল বলেও শোনা যায়।
জানা গেছে, সন্তানহীন দম্পতির মনস্কামনা পূরণের জন্য এই মন্দিরে যে আচারচি পালন করতে হয়, তাতে চুরি একটা বড় বিষয়। সন্তানহীন দম্পতিকে এই মন্দিরে এসে প্রণামী দিতে হয় ও দেবীমূর্তির পায়ের কাছে রাখা অনেকগুলি কাঠের পুতুলের একটি তখন চুরি করতে হয়। এই উপাচার পালন করলে নাকি সেই নি:সন্তান দম্পতির কোলে সন্তান আসে। আর সন্তান জন্মের পরে দম্পতিকে আবার মন্দিরে ফিরে আসতে হয়। তখন চুপিসারে রেখে আসতে হয়- সেই চুরি করা পুতুলটিকে! সেইসঙ্গে তাঁদের তরফ হতে একটি নতুন কাঠ-পুতুলকেও বসিয়ে আসতে হয় দেবীর পায়ের নিকটে।
১৮০০ সালেরও আগে হতে এই আশ্চর্য রীতি চালু রয়েছে। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের রাজা একবার শিকারের উদ্দেশ্যে জঙ্গলে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি এক দেবীর দেখা পান। দেবী একঝলক দেখা দিয়েই আবার উধাও হয়ে যান। তাঁর স্থানে পড়ে থাকে একটি কাঠ-পুতুল। ওই রাজা তখন সেই পুতুলটি বাড়ি নিয়ে আসেন। তিনি তার পূজা শুরু করেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রাণির কোলে আসে এক পুত্রসন্তান। দেবীর মহিমা বুঝতে পেরে ওই রাজা সেই পুতুলটি ফেরৎ দিয়ে আসেন যেখানে দেবীর দেখা পেয়েছিলেন, ঠিক সেইখানে। ক্রমান্বয়ে সেখানেই গড়ে ওঠে মন্দির। এবং এক সময় ‘পুতুল চুরি’র উপচার পরম্পরায় পরিণত হয়। যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।