মাঈনুল ইসলাম নাসিম ॥ বাংলাদেশের নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারা শুধু দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেও মর্যাদাপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছেন। যেমন বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিতে এক ইতিহাস সৃষ্টি করছেন ইসমাত জাহান।
মুসলিম দেশসমূহের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সংস্থা Organization of Islamic Cooperation ওআইসি’র মহাসচিব আইয়াদ আমিন মাদানি’র বিশেষ অনুরোধে সংস্থাটির ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পারমানেন্ট অবজার্ভার’ হিসেবে আগামী ৪ বছরের জন্য ব্রাসেলসেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সবচাইতে সিনিয়র নারী কূটনীতিক রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে ৪ বছরের ছুটিতে (লিয়েন) যাবার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়েছে ইতিমধ্যে।
বাংলাদেশের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও গৌরবজনক এই ‘প্রেস্টিজিয়াস’ পদে দায়িত্ব গ্রহণের সুবিধার্থে তাঁর লন্ডনে হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। সঙ্গত কারণে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগ দেবেন ইন্দোনেশিয়ায় দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাওনাইন।
জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ইসমাত জাহান গত ৭ বছর ধরে ব্রাসেলসে ইউরেপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কয়েক মাস আগে ঢাকায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতি গ্রীষ্মেই তাঁর লন্ডনে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো হাইকমিশনার হিসেবে।
২০০৯ সালে ব্রাসেলসে যোগ দেওয়ার আগে ৩ বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্বে ছিলেন ইসমাত জাহান। জাতিসংঘের Committee on Elimination of Discrimination against Women (CEDAW)-এর সদস্য পদে ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ইসমাত জাহান বাংলাদেশকে আগেই গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। টানা ৭ বছরের কর্মস্থল ব্রাসেলসে এবার ওআইসি’র ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন স্থায়ী মিশনে অত্যন্ত সম্মানজনক পদে যোগ দেওয়ার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এবং ওআইসি উভয়ের জন্যই রীতিমতো এক ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছেন এই নারী কূটনীতিক।
ইসমাত জাহানই প্রথম কোন বাংলাদেশী নারী যিনি মুসলিম দেশসমূহের সর্বোচ্চ সংস্থাটির বড় কোন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। ওআইসি’র ইতিহাসেও তারা প্রথমবারের মতো কোন নারী কূটনীতিককে এমন গুরুদায়িত্ব দিতে চলেছেন। কূটনীতিবিদ হিসেবে ৩৪ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহানের। প্রখর মেধা ও বিশাল অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অভাবনীয় যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ইসমাত জাহান ইউরোপিয়ান কমিশন ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছেন। তাঁর ক্যারিশমেটিক ডিপ্লোমেসিতেই ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’ পরবর্তী ইউরোপের বাজারে বড়সড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশের প্রধান রফতানী খাত (আরএমজি) তৈরি পোশাক শিল্প। এর আগে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ইসমাত জাহানের দায়িত্বপালনকালীন সময়ে নিউইয়র্কে নিজস্ব ভবনে আলোর মুখ দেখেছিল বাংলাদেশ মিশন।
ওআইসি এমন এক সময় ইউরোপিয়ান ইউনয়নে তাদের ‘পারমানেন্ট অবজার্ভার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সবচাইতে প্রভাবশালী নারী কূটনীতিক ইসমাত জাহানকে, যখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী জঙ্গীগোষ্ঠী। মাত্র ৩ বছর আগে ব্রাসেলসে পারমানেন্ট অবজার্ভার মিশন প্রতিষ্ঠা করে ওআইসি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালনে আগে থেকেই সিদ্ধহস্ত থাকার সুবাদে ওআইসি কর্তৃক বাংলাদেশী ডিপ্লোমেটকে নয়া দায়িত্ব প্রদানকে ইতিমধ্যে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রাসেলসে দায়িত্বরত বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতগন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, ব্রেক্সিট পরবর্তি সময়টাতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দেওয়ার চাইতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নেই আরো বহুগুণে বড় দায়িত্ব গ্রহণ ইসমাত জাহানের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারকে আরো সমৃদ্ধ করবে। সর্বোপরি বহুমুখী এবং বহুপাক্ষিক স্বার্থ রক্ষা হবে এখন বাংলাদেশের।