দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হয়তো অনেকের মনে আছে। ৫০০ কোটি টাকার বিয়ের খবর তখন সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল। সেই বিয়ে টিকলো মাত্র ১০ বছর!
বিয়ে হলো মানুষের জীবনের একটি প্রধান বিষয়। তাই এই বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকে অনেক রকম আয়োজন করে থাকেন। বিশেষ করে যাদের অঢেল টাকা রয়েছে তাদের তো বিয়ে মানে টাকার খেলা শুরু হয়।
এমনই এক ধনী বাবা তার মেয়েকে কথা দিয়েছিলেন যে, তার বিয়ে এমনভাবে হবে যে সে কথা পৃথিবী অনেকদিন মনে রাখবে। মেয়েকে দেওয়া সেই কথা রাখতে ও বিশ্বকে মেয়ের বিয়ের কথা মনে রাখার জন্য ভারতের ইস্পাত সম্রাট লক্ষী মিত্তাল খরচ করেছিলেন ৫০০ কোটি ভারতীয় রুপি! বাংলাদেশী টাকায় যা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫১৬ কোটি।
আর তাই ২০০৪ সালে তার একমাত্র মেয়ে বানিশার বিয়ে হয় প্যারিসে। ঐতিহাসিক ভার্সেই প্রাসাদকে মিত্তাল পরিণত করেছিলেন এক রাজকীয় বিয়ের বাড়িতে!
৫০০ কোটির বেশি ভারতীয় রুপি খরচ করে মিত্তাল তার ২৩ বছর বয়সী রাজকন্যার বিয়ে দেন ব্যাংকার অমিত ভাটিয়ার সঙ্গে। বিয়ের পোশাক বানিয়েছিলেন পৃথিবীর সেরা ডিজাইনাররা। কোরিওগ্রাফার ফারাহ খান শিখিয়েছিলেন নাচের ঝটকা! লুভর মিউজিয়ামের উল্টোদিকে বসেছিল সংগীতের আসর। জাভেদ আখতার লিখেছিলেন এক নাটক। যাতে অভিনয় করেন গোটা মিত্তাল পরিবার।
ভার্সেই প্রাসাদে হয় এনগেজমেন্ট। ক্যানক্যান ডান্সিং-এর সঙ্গে ছিল ফরাসি অপেরাও। অতিথিরা আপ্যায়িত হয়েছিলেন ল্য গ্রন্ড হোটেলে। মেহেদি অনুষ্ঠানের জন্য লো ব্রিস্টলকে মনোরম উদ্যানে পরিণত করা হয়েছিল সেদিন।
বানিশাকে মেহেদি পরাতে ভারত হতে উড়ে গিয়েছিলেন শিল্পীরা। উড়ে গিয়েছিলেন শাহরুখ খান‚ রানি মুখার্জি‚ জুহি চাওলা‚ সাইফ আলি খানের মতো বড় বড় তারাকারা! কয়েক লাখ রুপি খরচ করে তাদের দিয়ে হাস্যকৌতুক নাটক করা হয়!
ঐতিহাসিক ভ্য লো ভক্নতে এস্টেটে বসেছিল বিয়ের বিশাল আসর। ভারত হতে শিল্পীরা গিয়ে বানিয়েছিলেন উদ্যানের সরোবরে নকল পদ্ম। সেই প্রস্ফুটিত পদ্মে বসে বিয়ে করেছিলেন বানিশা-অমিত। মণ্ডপ সাজাতে হল্যান্ড হতে গিয়েছিলেন ফ্লোরিস্টরা। আগত অতিথিদের রাজকীয়ভাবে রাখার জন্য খরচ হয়েছিল কয়েক কোটি রুপি! বিয়ের রাতের মূল আকর্ষণ ছিল ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বিশেষ নাচ!
তবে বিয়ের মেনু ছিল সম্পূর্ণ নিরামিষ। কোলকাতা হতে শেফ মুন্না মহারাজ গিয়ে রান্নার দায়িত্ব নেন। সব মিলিয়ে‚ ভার্সেই প্রাসাদকে চতুর্দশ লুইয়ের রাজত্বকালের হতে কোনো অংশে কম করেননি লক্ষ্মী মিত্তাল।
তবে ২০০৪ সালে হওয়া বিশ্বের এই মহার্ঘ্যতম স্বপ্নসম বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এক দশক পূর্ণ হওয়ার আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা আদালতে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে পৃথক হয়ে যান বানিশা-অমিত! এতোবছর পরেও বিষয়টি রসাত্মক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংবাদ মাধ্যমের খবরে পরিণত হয়েছে।
মেয়েকে দেওয়ার কোটিপতি বাবার সেই কথা অর্থাৎ বানিশার বিয়ের কথা বেশ ভালোভাবেই মনে রেখেছে বিশ্ব। তবে একটি কথা বিশ্ববাসী জেনেছে আর তা হলো টাকা দিয়ে আর যায় হোক সম্পর্ক কখনও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। মনের মিলই বড় মিল, তা যদি কুড়ে ঘরেও বিয়ে হয় তাতেও সমস্যা নেই!