দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বাস ও ভক্তি মানুষের জীবনে অনেক কিছুই এনে দিতে পারে। ভক্তদের বিশ্বাস, ইচ্ছে পূরণ গাছে ইচ্ছে পূরণ ও কচ্ছপ ছুঁয়ে দিলে শিশু সন্তানের মঙ্গল হয়।
চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদে পাহাড়ের উপরে অবস্থিত ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে ওঠা মাজার শরীফ। মূল সড়কের পাশেই রয়েছে পাকা গেট। ওই গেট দিয়ে প্রবেশ করার পর এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে একটি বড় দীঘি। এখানে বাঁধাই করা ঘাটে মানুষের ভীড়। ভক্তদের আগ্রহ দীঘিতে ভাসমান বড় বড় কচ্ছপ। কেও কচ্ছপের শরীর ছুঁয়ে দেখছে, কেওবা খাবার দিচ্ছে, আবার কেও তার শিশু সন্তানকে দিয়ে কচ্ছপের শরীর ছুঁয়ে দেখাচ্ছে। এর কারণ হলো ভক্তদের বিশ্বাস, কচ্ছপ ছুঁয়ে দিতে পারলে ওই শিশু সন্তানের কোনো অমঙ্গল হবে না, মঙ্গল হবে।
চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্যও এই পবিত্র মাজারটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান।
ধারণা করা হয়, বর্তমানে এই দীঘিতে দেড়শো হতে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের ঠিক পেছনে সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
মাজারের ভক্তকূল ও আঞ্চলিক জনশ্রূতি রয়েছে যে, মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন ও পাপীষ্ঠ আত্মার নাকি পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামী এই অঞ্চলে ভ্রমণকালে এইসব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কচ্ছপে পরিণত করেন। শুধু তাই নয়, তাদের আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
ওই দীঘির ঘাটলা হতে কয়েক কদম এগিয়ে গেলে মাজারের সিঁড়ি। ওই সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের উপরে উঠলে মূল মাজারের স্থাপনা।
জানা যায়, এই সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেওয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে আবিষ্কার করা হয়। আঙ্গিনার ঠিক মাঝামাঝিতে একটি শবাধার অবস্থিত। পরবর্তীকালে সমাধিস্থলটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজার স্থাপিত হয়। ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে বলা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুফী সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড় এর উপরে বা জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন। এসব স্থানে মাজার কিংবা এই ধরণের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারটিও মূলত উনাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ।
মাজার আঙ্গিনায় বেড়ে ওঠা কয়েকটি গাছও রয়েছে। এই গাছগুলোকে বলা হয় ইচ্ছে পূরণ গাছ। তাই মাজার পরিদর্শনে আসা ভক্তরা চিরকুটে বিভিন্ন আর্জি লিখে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেন। ভক্তরা মনে করেন, যে আশায় সুতা বেঁধে দেন, ইচ্ছে পূরণ গাছের উছিলায় সেটি পূরণ হয়।
ইচ্ছে পূরণ গাছের প্রতি ভক্তদের কতোটা বিশ্বাস রয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় গাছের চিত্র দেখলেই। প্রতিটি গাছে এমনভাবে সুতা বাঁধা হয়েছে যে, গাছের পুরোটাই লাল রং ধারণ করেছে।
পাহাড়ের পাদদেশে একটি ৩ গম্বুজবিশিষ্ট মোঘলরীতির আয়তাকার মসজিদ। স্থাপত্যশৈলী হতে ধারণা করা হয় যে, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে এই মসজিদটি নির্মিত হয়।