দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একটু জ্বর হলেই আমরা ঘাবড়ে যায়। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি লোকও পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার কোনদিন একবারও জ্বর হয়নি। জ্বর কিন্তু কোনও রোগ নয়। বহু অসুখের একটি উপসর্গ।
কখন জ্বর বলা হয়
স্বাভাবিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা হচ্ছে ৩৬.৬-৩৭.২ সে. পর্যন্ত। এর থেকে (১-৪ সে. পর্যন্ত) বেশি হলেই আমরা ধরে নেই যে জ্বর হয়েছে। এই জ্বর সেন্টিগ্রেড বা ফারেনহাইট থার্মোমিটার দিয়ে মাপা হয়।
জ্বরের প্রকার
সাধারণত জ্বর তিন ধরনের হয়ে থাকে:
# কন্টিনিউড (Continued) : জ্বর এর মাত্রা যখন ২৪ ঘণ্টায় ১ সেন্টিগেড বা ১.৫ ফারেনহাইট তারতম্য হয়; কিন্তু জ্বর কোন সময় স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না, তখনই তাকে কন্টিনিউড জ্বর বলে।
# রেমিটেন্ট (Remitent) : যখন জ্বরের মাত্রা ২৪ ঘণ্টায় ২ সেলসিয়াস বা ৩ ফারেনহাইট তারতম্য হয়, তাকে রেমিটেন্ট জ্বর বলে।
# ইন্টারমিটেন্ট (Intermitent) : যখন জ্বর দৈনিক কয়েক ঘণ্টা শরীরে উপস্থিত থাকে, তখন তাকে ইন্টারমিটেন্ট জ্বর বলে।
এই ইন্টারমিটেন্ট জ্বর যদি প্রতিদিন আসে তখন তাকে কোটিডিয়ান জ্বর বলে। একদিন পরপর এলে টার্শিয়ান এবং দুই দিন পরপর এলে কোয়ার্টান জ্বর বলে। তবে এখন জ্বর নিরাময় ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ সেবনের ফলে এই জ্বরের শ্রেণীবিন্যাস সব সময় বোঝা যায় না।
কী কারণে জ্বর হয়ে থাকে
# যে কোনও একুইট ইনফেকশন বিশেষত পুঁজ তৈরিকারক ইনফেকশন যেমন ফোঁড়া, কার্বাংকল, ফুরাংকল। যেসব জীবাণু এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলো হল স্টাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেন্স।
# যে কোনও ভাইরাসজনিত প্রদাহ যেমন সর্দি জ্বর, কাশি, ডেঙ্গু, হুপিংকাশি।
# কলা বিনষ্টকারী বা টিস্যু নেক্রোসিস যে রোগে হয়, যেমন মায়োকর্ডিয়াল ইনফেকশন, আর্থাইটিস, রিউমাটিক ফিভার বা বাতজ্বর।
# যে কোনও কোষ কলা অর্গানের প্রদাহজনিত রোগ যেমন মেনিনজাইটিস, একুইট অস্টিওমাইলাইটিস, একুইট গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, একুইট হেপাটাইটিস।
# অটোইমিউন রোগ যেমন এসএলই, ইমুনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন।
# যে কোন টিস্যু বা অর্গান এর ক্যান্সারের কারণে।
# দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ক্রনিক ইনফেকশন, যেমন যক্ষ্মা রোগ।
# মহিলা ও পুরুষদের জননতন্ত্রের প্রদাহ। যেমন প্রস্রাবে ইনফেকশন, প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন, মেয়েদের অ্যান্ডোমেট্রাইটিস, সার্ভিসাইটিস, উফুরাইটিস, সালফিনজাইটিস ছেলেদের প্রস্টেটাইটিস, ইপিডিডাইমাইটিস, অরকাইটিস।
# পরজীবী ঘটিত রোগ, যেমন ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ট্রিপোনোসোমা ইত্যাদি।
জ্বর কেন হয়
জ্বর হওয়ার কারণ বিভিন্ন ইনফেকশন, টিস্যু নেক্রোসিস ইত্যাদির কারণে শরীরে জ্বর তৈরিকারী পদার্থ পাইরোজেন নিঃসরণ হয়। এই পাইরোজেন প্রোস্টাগ্লান্ডিন নামক কেমিক্যাল মেডিয়েটর তৈরি করতে উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়াল প্রডাক্ট, যেমন ব্যাকটেরিয়াল কলাইপোপলিস্যাকারাইড শ্বেতকণিকাকে উত্তেজিত করে ILI, TNF (এন্ডোজেনাস পাইরোজেন) তৈরি করে। এগুলো প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরিতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশ বা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানকার রক্তনালি ও এর আশপাশের কোষগুলোতে বেশি মাত্রায় প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরি করতে প্রভাবিত করে। এই সাইক্লিক এএমপি হাইপোথ্যালামাস শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর থেকে বেশি মাত্রায় পুনর্নির্ধারণ করে, যার ফলে জ্বর তৈরি হয়।
জ্বরের কারণ বের করার জন্য যে টেস্ট করা হয়
# রক্তের সাধারণ টেস্ট টিসি, ডিসি ইএসআর। এগুলোর মান স্বাভাবিক থেকে বেশি হবে।
# একুইট পর্যায়ে প্রোটিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
# এক্সরে চেস্ট।
# সিটি স্ক্যান/এমআরআই।
# রক্তের বিশেষ পরীক্ষা যেমন Widal, Febrile antigen
# বডি ফ্লুয়িড পরীক্ষায় যেমন CSF ও অন্যান্য বডিফ্লুয়িড।
# পরজীবী যেমন ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়া।
# দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন যক্ষ্মার জন্য পিসিআর, এএফবি, কালচার সেনসিটিভিটি।
# ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের জন্য এফএনএসি সাইটোলজি, বায়োপসি, লিমফোমা ও লিউকেমিয়া প্যানেল।
জ্বর প্রতিরোধের উপায়
# সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম
# সমস্ত শরীর পানি দিয়ে মোছা, গোসল করা।
# জ্বর কমার জন্য ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল খাওয়া।
# জ্বরের কারণ বের করার জন্য বিশেষ পরীক্ষাগুলো করা এবং সেই মতো ডাক্তারের উপদেশ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর পানীয়, ফলের রস, স্বাভাবিক খাবার খেলে, প্রতিদিন গোসল বা পানি দিয়ে শরীর মুছলে, প্রয়োজনে জ্বর কমানোর ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যাবে।
# অধ্যাপক ডা. মো. তাহমিনুর রহমান সজল
উপাধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধান
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ
(সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর)