দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চিরসত্যি হলো অন্য সব প্রাণির মতো মানুষের জীবন চিরস্থায়ী নয়। জন্ম নিলে মৃত্যু ঘটবেই। অবাক করার বিষয় হলো, পৃথিবীতে ৫টি শহর রয়েছে যেখানে মৃতদের স্থান নেই!
মৃতদের স্থান নেই বলে স্থানীয় প্রশাসন মৃত্যুকে নিষিদ্ধ করেছে। আসুন জেনে নেই পৃথিবীর সেই ৫টি শহরের নাম ও পরিচয়।
লংইয়ারবেন, নরওয়ে
আজব ধরনের এক কারণে নরওয়ের লংইয়ারবেন এলাকায় মৃত্যু নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বরফাবৃত হওয়ার কারণে নরওয়ের এই এলাকায় কোনো মৃতদেহই ডি কম্পোজ হয় না। এমনকী বহু বছর পূর্বে কবর দেওয়া মৃতদেহও এখানে একেবারে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ১৯১৭ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত এক ব্যক্তির ত্বকের কোষ হতে জীবিত ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণু পায় দেশটির বিজ্ঞানীরা। যে কারণে এই আজব শহরে মৃতদেহ কবর দেওয়ার মতো কোনো জায়গাই নেই। যে কারণে এই শহরে মৃত্যুকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাই মৃত্যুর পূর্বেই অসুস্থ, বয়স্ক মানুষদের নরওয়ের অন্য শহরে পাঠিয়ে দেওয়াটাই এখানকার রীতিতে পরিণত হয়েছে!
ফ্যালসিয়ানো দেল ম্যাসিকো, ইতালি
ইতালির ছোট্ট একটি শহর হলো এই ফ্যালসিয়ানো দেল ম্যাসিকো। এই এলাকায় মৃতদেহ কবর দেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। সে কারণে এই শহরে মৃত্যু নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখানে কেও মারাত্মকভাবে অসুস্থ হলে তাকে পাশের শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হলে ওই শহরেই কবর দেওয়া হয় তাকে!
ইতসুকুশিমা, জাপান
জাপানের ইতসুকুশিমাকে পবিত্র স্থান বলে মান্য করা হয়। ১৫৫৫ সালের মিয়াজিমা যুদ্ধের পর হতেই মৃত্যু নিষিদ্ধ নিয়মের শুরু এখানে। যুদ্ধে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সে সময। জয়ী রাজার নির্দেশ ছিলো- সমস্ত মৃতদেহ নিয়ে যেতে হবে ইতসুকুশিমা শহরের বাইরে। পরাজিত সেনাদের দিয়েই এই কাজটি করিয়েছিলেন তিনি। সেখানকার রক্তে ভেজা মাটিও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। পরিষ্কার করা হয়েছিলো প্রতিটি ঘর-বাড়ি। ১৮৭৮ সাল হতে মৃত্যু সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায় জাপানের এই ইতসুকুশিমায়। এখানেও মারাত্মক অসুস্থ কিংবা মৃত্যুপথযাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় ইতসুকুশিমার বাইরে।
সারপুরেনক্স, ফ্রান্স
ফ্রান্সের এই শহরটিতে কবরস্থানের সীমিত জায়গার কারণে মৃত্যু নিষিদ্ধ। এই সমস্যা গড়িয়েছিলো আদালত পর্যন্ত। তবে শহর প্রসারিত করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলো আদালত। যে কারণে মৃত্যুই নিষিদ্ধ হয়ে যায় ফ্রান্সের এই শহর সারপুরেনক্সে।
সেলিয়া, ইতালি
ইতালির একটি অঞ্চল হলো এই সেলিয়া। এই অঞ্চলের জনসংখ্যা গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার কারণে স্থানীয় মেয়র ডেভিড জিচিনেলা আইন প্রণয়ন করে এলাকায় মৃত্যু নিষিদ্ধ করেছেন। এই আইনে মৃত্যু নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি যদি কেও বয়স্ক ব্যক্তির শরীরের যত্ন না রাখেন তার জরিমানাও ধার্য করা হয়!
জানা যায়, ষাটের দশকে সেলিয়ার জনসংখ্যা ছিলো ২০০০-এর মতো। বর্তমানে এই শহরে বসবাস করেন মাত্র ৫৬০ জন অধিবাসী। তাদের বেশির ভাগের বয়স ৭০-এর কোঠায়। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুত জনশূন্য হয়ে পড়বে সেলিয়া। তাই এই পরিস্থিতি রোধে বাধ্য হয়ে এমন একটি আইন প্রণয়ন করেছেন স্থানীয় মেয়র ডেভিড।