দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিশু-কিশোররা বিভিন্ন সময় নানা আবদার করেন। সব আবদার সব সময় রাখা সম্ভব হয় না। তবে এবার এক কিশোর আবদার করা পিৎজা না পেয়ে পাঁচতলা হতে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেছে!
এমন একটি ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার শুক্রবার ভারতের আসামের শিলচরে। সে যেনো এক রুদ্ধশ্বাস প্রতিটি মুহূর্ত। পাঁচতলার কার্নিশে দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৩ বছরের এক কিশোর। ‘নড়িস না বাবা, একটা না, অনেক পিৎজা দেবো তোকে’- বলতে বলতে গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল অভিভাবকদের। আর এই সময় তাকে নিরাপদে নামাতে সব কৌশল প্রয়োগ করছিলো পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত এক যুবকের তৎপরতায় ও পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর সাহায্যে উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরকে। যেনো এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান ঘটে!
ওই কিশোরটির নাম অঙ্কিত পাল। তার বাড়ি শিলচরে নয়, আসামেরই নগাঁও জেলার যমুনামুখে। অঙ্কিত নিজ এলাকার সেন্ট্রাল স্কুলে পড়া লেখা করে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর তাকে স্কুলেই পাঠানো যাচ্ছিল না। বাবা নির্মল পাল এবং মা তপতী পাল অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শেষে পিসি জলি পাল তাকে শিলচরে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো শিলচর হতেই অঙ্কিত পড়াশোনা করবে।
গত বৃহস্পতিবার অঙ্কিতকে শিলচরে নিয়ে আসা হয়েছিলো। লিঙ্ক রোডে তার এক পিসির বাড়ি। রাতে হঠাৎ পিৎজা খাওয়ার বায়না ধরে ওই কিশোর। পিসি বা পিসেমশায় মোটেই গুরুত্ব দেননি। শুক্রবার সকালে মায়ের সঙ্গে পিসির বেশ কিছুক্ষণ ফোনে কথা হয়। পিৎজা প্রসঙ্গেও আলোচনাও হয়। সেই সময় অঙ্কিত ফোন টেনে কিছু একটা বলতে চেয়েছিল তার মাকে। পিসি জলিদেবী সে সুযোগ দেননি।
তারপরই ছাদে উঠে পাইপ বেয়ে জানালার কার্নিশে নেমে গিয়ে দাঁড়ায় অঙ্কিত পাল। প্রথমে বিষয়টি পথচারীদের দু-একজনের দৃষ্টি গোচর হয়। দেখতে দেখতে নীচে ভিড় জমে যায়। এরই রেশে শহর জুড়ে যানজটের মাত্রা ছাড়ায়। ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ, দমকল বাহিনী ও এসডিআরএফ। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পিসি। কার্নিশে দাঁড়িয়েই শত শত পিৎজার ‘অফার’ পাচ্ছিল অঙ্কিত! দু-একজন গিয়ে দোকান থেকে পিৎজা কিনেও নিয়ে আসেন। তবু নামতে রাজি হয়নি অঙ্কিত। তার একই বক্তব্য- এই জীবন রেখে লাভ নেই, সে মরে যেতে চায়।
এমন এক অবস্থায় পার হয় ঘণ্টা দুয়েক। তারপর পেছন হতে মান্না বড়ভুইয়া নামে এক যুবক দালান বেয়ে আচমকা অঙ্কিতের পা ধরে ফেলেন। মান্নার পেছনে পেছনে এগিয়ে যায় জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর এক জওয়ানরাও। তখন ছাদ হতে রশি ফেলা হলে দু’জনে মিলে তার কোমর বেঁধে ফেলা হয়। অন্যরা তখন তাকে টেনে ছাদে নিয়ে যায়। তবে নীচে নামানোর পরেও অভিমান কমেনি অঙ্কিতের। পিসিকেই নানাভাবে দোষারোপ করে যাচ্ছিল অঙ্কিত। পুলিশ তাকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। তবে শরীরের কোথাও কোনো চোট লাগেনি তার। ছিল না তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতাও। পুলিশ তার পিসি জলিদেবীর হাতেই তাকে তুলে দেয়। এভাবেই ঘটে দুই ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর এক উদ্ধার অভিযান। এ সময় ওই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার মানুষ ভীড় করে সেখানে।