দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কেও ভিখারী থেকে রাজা, আবার কেও রাজা থেকে ভিখারী হয়ে যায়। দুনিয়ার রীতিই বোধহয় এমন। যেমন হয়েছেন ভারতের ওড়িশার এক শাসকের। তিনি রাজা থেকে হয়েছেন ভিখারী!
যার এক সময় ছিলো ২৫টি গাড়ি। যে রাজার সেবায় সর্বদা নিয়োজিত ছিল ৩০ জন দাস-দাসী। শেষ জীবনে এসে তাঁকেই বেঁচে থাকতে হয়েছিল গ্রামবাসীর দয়া দাক্ষিণ্য নিয়ে! বছর দেড়েক পূর্বে মৃত্যু হয় ওড়িশার ওই হতভাগ্য রাজার। যাঁর প্রথম জীবন কেটেছিল অতল আমোদ-প্রমোদ বিলাসে। তাঁর শেষ জীবনে কেবলমাত্র ভরসা ছিল গ্রামবাসীদের দেওয়া চাল ডাল!
ভারতের ওই রাজার নাম হলো ব্রজরাজ ক্ষত্রিয় বীরবর চমুপতি সিং মহাপাত্র। তাঁর জন্ম ১৯২১ সালে। ব্রিটিশ-ভারতের ওড়িশার রাজ্য স্টেট তিগিরিয়ায়। কলিঙ্গ হতে ওড়িশায় পরিবর্তিত পর্বে টিকে ছিল ২৬টি প্রিন্সলি স্টেট। তারমধ্যে সবচেয়ে ছোট হলো তিগিরিয়া। টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১২৪৫ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থানের সোম বংশীয় শাসকদের একটি শাখা আসে ওড়িশায়। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল টুং রাজবংশ। প্রথমে পুরীর রাজার অমাত্য‚ পরে তিগিরিয়া স্টেটের শাসক হয়ে ওঠেন এসব রাজারা।
সেই বংশেই জন্ম হয় রাজা ব্রজরাজের। ভারতবর্ষে রাজতন্ত্র লোপ পাওয়ার পূর্বে তিগিরিয়ার শেষ নৃপতি তিনি। তাঁর সেবায় অপেক্ষা করতো ৩০ জন দাস-দাসী। দাঁড়িয়ে থাকতো ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি।
জানা যায়, শোনপুরের রাজকন্যা রসমঞ্জরী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে একসময় স্ত্রী‚ ৬ সন্তান সবাই একে একে নিজেদের জীবন হতে বিছিন্ন করে ফেলে তাঁকে। বিয়ে ভাঙার পর রসমঞ্জরী রাজনীতিতে এসে হয়ে যান বিধায়ক। আর তখন থেকেই ব্রজরাজ ডুবে যান নিদারুণ দারিদ্র্যে।
স্বাধীনতার পর তাঁর ভরসা ছিল বার্ষিক ভাতা। যিনি একসময় অনায়াসে মেরেছেন ১৩টি বাঘ এবং ২৮টি লেপার্ড। সেই বারুদের গন্ধমাখা হাত পরর্তীতে পাততে হতো সরকারি দরবারে; সামান্য কিছু টাকার জন্য। মাসে এক হাজারেরও কম টাকা পেতেন তিনি।
অভাবে জর্জরিত হয়ে তিনি ১৯৬০ সালে বিক্রি করে দিলেন রাজ প্রাসাদ। তারপর সন্তানদের নিয়ে চলে গেলেন তাঁর স্ত্রীও। ১৯৭৫ সালে বন্ধ হয়ে গেলো তাঁর সরকারি ভাতা।
তারপর হতে বেঁচে ছিলেন গ্রামবাসীদের দয়া-দাক্ষিণ্য নিয়েই। মাটির বাড়িতে বসবাস করতেন অ্যাসবেস্টাস। অতীতের প্রজাদের দেওয়া ভাত-ডাল সামনের থালায় দেখতে হতো। মিটতো এক সময়ের এক রাজার ক্ষুণ্ণিবৃত্তি।
চরম অর্থকষ্ট ও রোগশয্যায় কেটেছিল তাঁর শেষ জীবনগুলো। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রয়াত হন রাজা হতে ফকির হওয়া ব্রজরাজ।