দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন কথা শুনে যে কেও আশ্চর্য হবেন সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবেই ঘটেছে তাই। এক ব্যক্তির মাথায় অস্ত্রোপচারের সময়ও তিনি বাজাচ্ছিলেন গিটার!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায় এমন আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে। আঙ্গুলের মাংসপেশি সংকোচনের সমস্যা সারাতে গিয়ে মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের সময় গিটার বাজিয়ে খবরের জন্ম দেন এক ভারতীয় শিল্পী।
বিবিসির খবরে প্রকাশ, ভারতের অভিষেক প্রসাদ নামে ওই গিটারবাদক অস্ত্রোপচারে চিকিৎসককে সহায়তা করতেই সেসময় গিটার বাজিয়েছেন!
জানা যায়, ৩৭ বছর বয়সী অভিষেক দীর্ঘদিন যাবত ভুগছিলেন ‘মিউজিশিয়ানস ডিসটোনিয়া’ রোগে। এই রোগে আঙ্গুলের মাংসপেশির যন্ত্রণাদায়ক সংকোচন, বেঁকে যাওয়া কিংবা অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়ার মতো সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। যে কারণে গিটার বাজাতে গেলে তিনি বাঁ হাতের মধ্যমা, অনামিকা এবং কনিষ্ঠা আঙ্গুল নাড়াতে পারতেন না।
জানা গেছে, ব্যাঙ্গালোরে মাথার খুলি ফুটো করে এই অস্ত্রোপচার করার পর আবারও তিনি গিটার বাজাতে পারছেন। অস্ত্রোপচারের সময় আঙ্গুলের সাড়া পর্যবেক্ষণের জন্যই তাকে গিটার বাজিয়ে যেতে বলেছিলেন চিকিৎসকরা।
অভিষেক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তার আঙ্গুলে সমস্যা দেখা যাচ্ছিল কেবল গিটার বাজানোর সময়। ভেবেছিলেন, অতিরিক্ত প্র্যাকটিসের কারণে আঙ্গুলের এই জড়তা হচ্ছে। তবে কয়েকবার চেষ্টা করে বুঝলেন এই জড়তা তাকে ছাড়বে না।
“কয়েকজন চিকিৎসক এটাকে মাংসপেশির ক্লান্তি বলেছিলেন। পেইনকিলার, মাল্টিভিটামিন, অ্যান্টিবায়োটিক এবং ফিজিওথেরাপিও দিয়েছিলেন। তবে ৯ মাস পূর্বে একজন নিউরোলজিস্ট এই সমস্যাকে ডিসটোনিয়া বলে শনাক্ত করেন এবং অপারেশনের পরামর্শ দেন।”
অভিষেক বলেছেন, মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ শুনে তিনি প্রথমে বেশ ভয় পেয়েছিলেন। তবে তার চিকিৎসক শরণ শ্রীনিবাসন তার আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন।
সাধারণত: এই ধরনের অস্ত্রোপচারে রোগীকে কখনও সংজ্ঞাহীন করা হয় না। মস্তিস্কের ভেতরে ব্যথার অনুভূতি হয় না বলে শুধু বাইরের অংশে অ্যানেসথেশিয়া দেওয়া হয়ে থাকে। এরপর খুলিতে নির্দিষ্ট মাপের ছিদ্র করে ভিতরে ঢোকানো হয় একটি ইলেকট্রোড।
আবার এই মস্তিস্কের অকার্যকর স্নায়ুকে সচল করার জন্য ওই ইলেকট্রোড দিয়ে পাঠানো হয় মৃদু বৈদ্যুতিক তরঙ্গও। রোগী সচেতন (সংজ্ঞা) থাকায় অস্ত্রোপচার কতোটা কাজে দিচ্ছে তা চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন তাৎক্ষণিকভাবে।
গিটারবাদক অভিষেক অস্ত্রোপচারের সময় প্রতিটি বিষয়ই পরিষ্কারভাবে মনে করতে পেরেছেন । তিনি জানিয়েছেন, এমআরআই স্ক্যাণ চালানোর পূর্বে চিকিৎসকরা খুলি ফুটো করতে তার মাথায় চারটি স্ক্রু দিয়ে একটি ফ্রেম ভালোভাবে আটকে দিয়েছেন, সেগুলোও তিনি অবলোকন করেছেন।
অস্ত্রোপচারের মধ্যেই অভিষেকের মনে হয় কোথাও কিছু একটা চালু হলো। তবে তখন কোনো ব্যথা বুঝতে পারেননি তিনি। মোট ৬ বার বিদ্যুৎ তরঙ্গ দেওয়ার সময় তাকে চিকিৎসক গিটার বাজাতে বলেছিলেন। অস্ত্রোপচারের টেবিলে তিনি একেবারেই স্বাভাবিক ছিলেন।
ডা. শ্রীনিবাসন বলেছেন, ১৪ মিলিমিটারের একটি গর্ত করে অভিষেকের খুলির মধ্যে ওই বিশেষায়িত পরিবাহী ইলেকট্রোড প্রবেশ করানো হয়েছে। যে নার্ভে কাজ করতে হয়েছে সেটি ছিল মস্তিস্কের ৮ হতে ৯ সেন্টিমিটার গভীরে।
ওই চিকিৎসক বলেছেন, “পুরো সময়টিই অভিষেক সচেতন ছিলেন। ফলাফলও হাতেনাতে অস্ত্রোপচারের টেবিলে পাওয়া গেছে। কারণ হলো তার আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবেই গিটারে নড়াচড়া করছিলো!”
অস্ত্রোপচারের পর বাম হাত এবং বাম পায়ে কিছুটা দুর্বলতা অনুভব করছেন অভিষেক। তবে মাসখানেকের মধ্যে সেরে উঠে পুরোদমে প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতে পারবেন সেটিই তার আশা।